বিশেষ প্রতিনিধিঃমহম্মদপুরে আওয়ামী লীগের দুই নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার বালিদিয়া গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি একজন খুন হওয়ার ঘটনায় ৩৭ জনের নামে মামলা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে আসামিরা জামিন নিয়ে আসেন।
এরপর কয়েক দিন ধরে আসামিপক্ষের অন্তত ২০টি বাড়িতে হামলা ভাঙচুর লুটপাট চালানো হয়। আবারও পাল্টাপাল্টি হামলার ভয়ে বর্তমানে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা গেছে, এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মিনার সঙ্গে একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ইউনুছ শিকদারের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে।
এর জেরে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক পুলিশ সদস্য সাইদ মোল্লা খুন হন। পরে গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাদীপক্ষ কয়েক দফা ওই সব বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বালিদিয়া গ্রামের ইমরুল শিকদার, সোলেমান সর্দার, মোনায়েম শিকদার, জলিল শিকদার, সাজ্জাদ খান, কাঞ্চন মোল্লা, নুর আলম, রইস মৃধা, নীল মোল্লাসহ অন্তত ২০টি পরিবার এই ঘটনার শিকার হয়।
সোমবার সরেজমিন ওই গ্রাম ঘুরে খুনসহ ভাঙচুর-লুটপাটের নানা তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য এনায়েত শিকদারের স্ত্রী রেখা বেগম জানান, ঘটনার দিন গত ১৩ জানুয়ারি রাতে তাঁর স্বামী এনায়েত মোল্লা বাড়িতেই ছিলেন না। অথচ তাঁর স্বামীকে এ মামলার আসামি করা হয় এবং ঘটনার ১৮ দিন পর তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট চালানো হয়।
রেখা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার সদ্য বিয়ে হওয়া বড় মেয়ের জন্য ঘরে থাকা,কাঠের নতুন পালঙ্ক, অন্যান্য আসবাবসহ সব মালপত্র লুট করে নিয়ে যায় কিছু লোকজন। তা ছাড়া একমাত্র বসতঘরটি ভেঙে দিয়েছে। দিনের বেলায় একা বাড়ি পাহারা দিই। রাতে থাকি অন্য বাড়িতে। আমার স্বামী ও ছেলে প্রাণভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না। দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। স্কুলে যেতে পারছে না।
এলাকা ঘুরে মফিজুর রহমান মিনার সমর্থকদের অনেককেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া কোনো কোনো বাড়িতে দু-একজন নারী সদস্য পাওয়া গেছে। তাঁদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। ঘটনার পর থেকে মফিজুর রহমান ও ইউনুছ শিকদার গাঢাকা দিয়েছেন। ভাঙচুরের শিকার ইমরুল শিকদারের বাড়িতে কথা হয় প্রতিবেশী ষাটোর্ধ্ব ফুলজান বিবির সঙ্গে। ইমরুল শিকদারের গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ি দেখিয়ে ফুলজান বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়। খবর দেওয়া হলেও এতক্ষণ পুলিশ আসেনি। পরে যখন পুলিশ এসেছে, ততক্ষণে সব শেষ। এলাকায় মানুষ খুন হয়েছে, তার জন্য আইন আছে, বিচার আছে।
বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট কেন করা হবে?’মাগুরা পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ‘গত ১৩ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের পর ৩২ জনের নামে মামলা হয়েছে। আসামিরা এরই মধ্যে জামিন পেয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তার পরও এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা রয়েছে।
Discussion about this post