বিশেষ প্রতিনিধিঃচট্টগ্রামে প্রথম সংক্রমণের ৪৮ দিনের মাথায় এসে শনাক্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১ হাজারের বেশি। তবে পরবর্তী মাত্র ৭ দিনে চট্টগ্রামে শনাক্তের সংখ্যা ছাড়ালো ২ হাজারের ঘর। সবার মনে একটিই প্রশ্ন, ঈদের পর পরই কি বিপর্যয়ের পথে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম? করোনার সংক্রমণের এমন বিস্ফোরণ ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসক, প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রামে করোনার গতিপথ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই ব্যক্তি তার ওমরা ফেরত মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় করোনা রোগী শনাক্ত হন ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে। এরপর থেকেই চট্টগ্রামে লাফিয়ে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ।
তবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৪৮ দিন অর্থাৎ গেল বৃহস্পতিবার (২১ মে) ২৫৭ জন শনাক্তের মধ্য চট্টগ্রামে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা হয়েছিল ১ হাজার ২২৮ জনে।
এরপর থেকে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা। সর্বশেষ বুধবার (২৭ মে) নতুন করে আরো ২১৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্তের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০০ জনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে করোনার সংক্রমণ। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছে দেশে করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা।
তবে এমন পরিস্তিতি সৃষ্টি হওয়ার পিছনে সংশ্লিষ্টরা দুষছেন ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষ জনের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা, গার্মেন্টস খুলে দেওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উন্মুক্ত যাতায়াতসহ সাধারণ মানুষের অসচেতনতাকে। তবে প্রথমদিকে নগরের প্রবেশমুখ সিটি গেট, আকবরশাহ ও পাহাড়তলী এলাকাকে করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনায় বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করেছিল প্রশাসন। তবে এতে দমিয়ে রাখা যায় নি করোনার সংক্রমণ। বরং কোনও বাধা বিপত্তি তোয়াক্কা না করে একে একে পৌঁছে গেছে প্রতিটি এলাকায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম শহরেই সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৪১ জন। যা মোট রোগীর প্রায় ৮০ শতাংশ। তাছাড়া শনাক্তের পর প্রথম ৪৮ দিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৪৪ জন। অথচ পরের ৭ দিনে (বুধবার ২৭ মে) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৬১ জন। অর্থাৎ এক সপ্তাহে মৃত্যুবরণ করেছে ১৭ জন।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, ঈদের ছুটি ও সাধারণ ছুটি শেষে এ পরিস্থিতি ডেকে আনবে আরও মারাত্মক বিপর্যয়।
তবে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার জ্যামিতিক আকারে বেড়ে গেলেও একে বিপর্যয় বলতে নারাজ চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন এটি বিপর্যয় নয়। কারণ এখানে ফ্যাসিলিটিসও বেড়েছে। করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রামে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন শয্যা সংখ্যা।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মানুষ ঘর থেকে বের হয়েছে তাই সংক্রমণও বেড়ে গেছে। এভাবে দিন বাড়ার সাথে সাথে সংক্রমণ বাড়ছে।
যদি ও বা করোনা নিয়ে কাজ করা চট্টগ্রামের শীর্ষ দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজেরাই ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শাহরিয়ার কবীর ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ করোনা আক্রান্ত হয়ে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ কোন দিকে যাচ্ছে।
এদিকে ৩০ মে এর পর অবসান ঘটবে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা সাধারণ ছুটির। সারা দেশের মত চট্টগ্রামেও সীমিত আকারে খুলবে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন। এতে চট্টগ্রামে এই বিপর্যয় ঠেকানোর উপায় কি হবে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক ও সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করতে পারলে ঠেকানো যাবে করোনা সংক্রমণ। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকারি বিধি নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার পাশাপাশি নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করা বিশেষ প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।