ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল তা আপাতত কেটে গেছে! গত দুই বছর করোনার অজুহাতে তা বন্ধ রাখা হলেও এবার লালদীঘির মাঠ সংস্কার কাজ চলমান থাকায় তাতে মেলা ও বলীখেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কমিটি।
তবে ঐতিহ্যবাহী এ জব্বারের বলীখেলা ও মেলা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাত ১১ টার পর মেয়রের বহদ্দারহাটের বাসায় টানা দু ঘণ্টা ধরে ১টা পর্যন্ত মেলা ও বলীখেলা কমিটির সঙ্গে সিটি মেয়র এর বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে যথাসময়ে
১২ বৈশাখ লালদীঘির প্রধান সড়কেই বলীখেলা ও তিন দিনের বৈশাখী মেলা চালুর সিদ্ধান্ত দেন। আয়োজনে এই সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে অন্ধকারাচ্ছন্ন মেলা কমিটি আশার আলোর দেখা পেল।
বিষয়টি রাত ১টা ১০ মিনিটে নিশ্চিত করেছেন জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জামাল হোসেন। তিনি বলেন, মেয়রের সঙ্গে রাত ১১টা থেকে কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীসহ আমরা বৈঠকে মিলিত হয়েছিলাম। উনি সব কথা শুনে মেলা কমিটির সেক্রেটারি ও আব্দুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদলের সঙ্গে কথা বলেন। মেয়র উনাকেও বলেছেন লালদীঘির সড়কেই যথাসময়ে বলীখেলা ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক সহযোগিতায় থাকবেন মেয়র নিজেই।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এখনো প্রাইমারি লেভেলে রয়েছে। মেয়র শনিবার সকাল ১১টায় মেলা কমিটি ও চসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবেন।
গত দুই দিন ধরে মাঠের অভাবে বলীখেলা ও মেলা আয়োজন বন্ধ থাকার ঘোষণায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে।
লালদীঘির মাঠে ঐতিহাসিক ছয় দফাসহ বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা সাক্ষী লালদীঘির মাঠটিতে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐতিহাসিক ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ম্যুরাল স্থাপন, কিডস কর্নার, ঘাস লাগানো, সীমানা প্রাচীর, ফটক নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। লালদীঘির মাঠটি এখনো উন্মুক্ত না হওয়ায় তিন দিনব্যাপী ঐতিহাসিক বৈশাখী মেলা ও জব্বারের বলীখেলা তৃতীয়বারের মতো না হওয়ার বিষয়টি গত ১২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় আয়োজক কমিটি।
মেয়র জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে মেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর সঙ্গে কথা বলবেন। যে কোন মূল্যে মেলা করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় বৃহস্পতিবার রাতে ডাক পড়ে জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির। কমিটির সেক্রেটারি ও আব্দুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদলকে বিশেষভাবে ডেকে পাঠান মেয়র।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার বিকেলে বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি, স্থানীয় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেছিলেন, মাঠ এখনো উদ্বোধন হয়নি তাই আমরা মেলা-খেলা দুটাই না করার কথা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলাম। তবে আজকে মেয়র মহোদয় তার বাসায় আব্দুল জব্বারের পরিবার ও মেলা কমিটিকে তার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘মাঠের কারণে হয়তো বলীখেলা হবে না। তাছাড়া স্পন্সরসহ নানা প্রস্তুতি নিতে হয়। তবে মেলার বিষয়টির সাথে পুলিশ প্রশাসন জড়িত। সেটার জন্য শুধু ঘোষণাটাই যথেষ্ট আর পুলিশের রোডম্যাপসহ সহযোগিতা। তাই অন্তত দুই বছর পর হলেও মেলাটা আমরা করতে চাই। আশা করি মেয়র মহোদয় সেই সিদ্ধান্তই দিবেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা।
এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হতো জব্বারের বলীখেলা। এই বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘির আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসত বৈশাখী মেলা।
Discussion about this post