কুতুব উদ্দিন রাজুঃমুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রাম’র ১৪ তম দিনে “কলম সাহিত্য সংসদ” লন্ডন শাখার কর্তৃক সাহিত্য সম্মেলন ও বিভিন্ন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারী,রবিবার বিকাল ৫ টায় সংগঠনের চট্টগ্রামের সভাপতি কবি করুণা আচার্যের সভাপতিত্বে, এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখিকা শহীদ জায়া মুশতারি শফি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি ও সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী, কলামিষ্ট অধ্যক্ষ রুনু বিলকিস,কলম সাহিত্য সংসদ লন্ডন’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফজলুল কাদের, সাদেকুজ্জামান চৌধুরী।
আবৃত্তি শিল্পী দিলরুবা খানমের পরিচালনায় এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কাদেরীয়া আজম চৌধুরী, কবির কাঞ্চন, মোফাচ্ছেল হক শাহেদ, মোস্তাক মুছা, ইউনুছ ইবনে জালাল প্রমুখ। এতে সংগীত পরিবেশন করেন ফৌজিয়া রহমান, আলিয়া আরিফ, মধুলিকা চৌধুরী, উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন হোসাইন ইব্রাহীম, আবৃত্তি করেন সুবশ্রী চৌধুরী।
সভায় প্রধান অতিথি মুশতারি শফি বলেন ২১ শে ফেব্রুয়ারী দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা এবং বিশ্বের জাতি সংঘ ভুক্ত দেশগুলো পালন করে আসছে। বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ছাত্র তরুণরা একুশে ফেব্রুয়ারী প্রাণ দেন ঢাকার রাজপথে। তার পর প্রতি বছরই এদেশের বাঙালিরা অমর শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
এই একুশের চেতনা হল এক কথায় একুশ মানে মাথা নত না করা। এভাবে বাঙালি গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক, সাধিকার অর্জনের সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়। একুশের পথ ধরে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। প্রতি বছরই একুশকে নিয়ে আমাদের লেখক, সাহিত্যিক, কবি এবং সৃজনশীল নতুন লেখকরা হাজির হন একুশের বই মেলায়। এক কথায় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী প্রভাত ফেরী সঙ্গী ও আমাদের মনে একটা ঐক্যের সূচনা করে।
একটা উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়। এবার একুশে এসেছে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এক সংকটময় পরিস্থিতিতে। আমরা আত্ম সমালোচনার পথ পরিহার করে মহৎ বুলিগুলো পুনরুক্তি করছি। একুশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ভাষার উর্দ্ধে উঠে তাদের স্বপ্ন আদর্শকে সমুজ্জ্বল করে একদিন এদেশের দামাল ছেলেরা ১ সাগর রক্ত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। জননী জায়া, ভগ্নিরা তাদের হারিয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। শুধু মহৎ শব্দরাজি উচ্চারণ করেই আমরা নিজেদের দায় মুক্তি করতে পারিনা। মনে রাখতে হবে ভাষার অভিনাশী শক্তি মানুষের আত্মিক মুক্তি, সৃজনশীল বিকাশ এবং তার মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে বাঁধা।
এই একুশের মহৎ দিনটি সমগ্র জাতিকে পথ দেখাবে সামনে এগিয়ে চলার। উজ্জ্বল উদ্ধারের সাধনার কোন বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হল সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে চলা। কাউকে পেছনে ফেলে রাখার গণতন্ত্রের সাধনায় নেই। আমাদের আত্মপরিচয়ের উপর থেকে মোহাবরণ উন্মোচিত করুন। মহান একুশে এটাই হোক আমাদের প্রার্থনার বাণী। সভার বিশেষ অতিথি কবি ও সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী বলেন ৫২’র ভাষা আন্দোলন না হলে আমাদের সাহিত্য আজ বিশ্বমান অর্জন করতে পারতো না।
সেদিনের শহীদদের আত্মদানের ফলেই বাংলা ভাষা আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জন করেছে। মূলত আমাদের সাহিত্য আবর্তিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে। কবিতা, গল্প ও উপন্যাস সহ গদ্য সাহিত্যের বিকাশ বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বর্তমানে ক্ষমতায় থাকলেও সামাজিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে।
এটা আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের পরিপন্থি। সভা শেষে আবুল হোসেন হেলালী রচিত উপন্যাস “ভুলের পাশ্চিত্য, কাজী রুনু বিলকিস রচিত ইতিহাসের আড়ালে ইতিহাস, করুণা আচার্যের স্মৃতির করুণা, মোশতাক মুছার কবিতা বই “কালে তরী ও উপন্যাস অপরাধী, হুমায়ুন আবিদ রচিত ছড়ার হাটে খুশীর হাটে, করুণা আচার্যের মাঠ পেরুলেই মাঠ, গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। এছাড়া কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিককে সংগঠনের পক্ষ থেকে সনদ প্রদান করা হয়।