চট্টগ্রাম নগরীতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ক্লিফটন গ্রুপের ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির পিয়ন মোঃ আব্দুল রহিম প্রকাশ রিপন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের জেরার মুখে আসল ঘটনা বেরিয়ে এসেছে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর উদ্ধার করা হয়েছে সেই ১০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়িস্থ ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের পর তা আত্মসাৎ করার উদ্দ্যেশে ডিবি পুলিশ সেই ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করেছে এবং আহত করার নাটক সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ক্লিফটন গ্রুপের ফিনিশিং বিভাগে পিয়ন মোঃ আব্দুল রহিম প্রকাশ রিপন।
পুলিশের তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসার পর জড়িত রিপনের সহযোগী পাহাড়তলী রেলওয়েতে কর্মরত মোঃ সেলিম (৩৫)কে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। মূলত ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে বন্ধু সেলিমের নগরীর টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনী, ১৯/৫ রেলওয়ে কোয়ার্টারের বাসায় রেখে আসে পরে পুলিশ সে বাসায় অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, মোঃ আব্দুল রহিম প্রকাশ রিপন ক্লিফটন গ্রুপে ফিনিশিং বিভাগে পিয়ন পদে কর্মরত ছিল। রিপনসহ অফিসের অন্যান্য পিয়নরা প্রায় সময় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে অফিসে জমা দিত। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌণে একটার প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক মোঃ সাহেদ দশ লাখ টাকার একটি চেক পিয়ন রিপনকে দেয় ব্র্যাক ব্যাংক কাজীর দেউড়ি শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য। রিপন উক্ত চেক নিয়া ব্যাংকে গেলেও দুপুর দেড়টার দিকে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে বেরিয়ে টাকা নিয়ে অফিসে না গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। অফিসের মহাব্যবস্থাপক ওয়াহিদ (৪২) ব্র্যাক ব্যাংকের কাজীর দেউরী শাখায় গিয়ে পিয়ন রিপনকে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এর পর তদন্তে নামে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া তদন্তকালে জানতে পারেন পিয়ন আব্দুল রহিম ওরফে রিপন ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর আত্মগোপনে ছিলো। পরে রিপন নিজেই বাসায় গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মাথায় আঘাত পাওয়ার অভিনয় করেন। তার এই অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজন রিপনকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারপর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করে। এসআই ইকবাল সংবাদ পেয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে রিপনের সঙ্গে দেখা করেন। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন রিপনের শারীরিক অবস্থা ভালো। পরে হাসপাতাল থেকে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের পর তা জমা দিতে তিনি নুপুর মার্কেটস্থ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে যান। নুপুর মার্কেটের সামনে ডিবি পরিচয়ধারী ২ জন ব্যক্তি তার ওয়ারেন্ট আছে বলে জোরপূর্বক একটি সিএনজিতে তুলে নেয়।
বিআরটিসি মোড়ে নিয়ে সিএনজি’র ভেতর থেকে তার কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। বলে জানায়। একপর্যায়ে তাকে বায়েজিদ লিংক রোডে নিয়ে গেলে সে পানি খেতে চাইলে পানি খাওয়ার পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এর পরে সে কিছুই জানে না। পরদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে অলংকার এলাকার একটি ঝোপ ঝাড়ের ভিতরে পড়ে আছে দেখতে পায় বলে জানায়। থানায় করা অভিযোগ এবং রিপনের বক্তব্যের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে কোন সত্যতা না পেয়ে তাকে বার বার জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসল ঘটনা সে স্বীকার করে। সে জানায় অন্য এক ব্যাক্তির সাথে পাটনারে গ্লাসের (কাঁচের) ব্যবসা করতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা লস হয়ে গেছে। মূলত সেটা পুষিয়ে নিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছে। পরে তার স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে পুলিশ বুধবার গভীর রাতে নগরীর টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনী, ১৯/৫ রেলওয়ে কোয়ার্টারের বন্ধু সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে ব্যাগভর্তি নগদ ১০ লাখ টাকা ও রিপনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনার নায়ক পিয়ন রিপন ও তার বন্ধু সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।