রামিম দেওয়ান:একপাশে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া শিশু মুসাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে, আরেক পাশে মুসার হাত ধরে দাড়িয়ে আছেন নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সোহরাওয়ার্দী হোসেন(ওসি)নওগাঁ সদর।
আর কোলে হাস্যজ্জল মুসার নিঃপাপ মুখে হাসি যেন এই বার্তা দিচ্ছিল অপরাধীরা কখনো সফল হয়না।আর পাপ বাপকেও ছাড়েনা। এরপর সাংবাদিকরা মুসার পিতার কাছে হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়ে তার অনুভুতি জানতে চাইলেন। মুসার বাবা খুশির কান্নায় কান্না জরিত কন্ঠে বললেন অনেক ভাল লাগতিচে ভাই,থানার সবার কাছে আমি খুব খুশি,পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমি ধন্যবাদ জানাই।
যে আমার বাচ্চাটা ফেরত দিসে আমি খুব খুশি ভাই।এসময় বুক ফাপরে কান্না উঠে আসলো শিশু মুসার বাবার।কাঁদতে কাদতে বললেন আর আমি ঐ মহিলাটার বিচার চাই,আমার ৫ মাসের দুধের বাচ্চাকে মায়ের বুক থেকে কেরে নিয়ে গেছে স্যার আমি ঐ মহিলাটার বিচার চাই। এর পর সাংবাদিকদের নিউজ বুম গুলো হারানো সন্তানকে ফিরে পাওয়া মুসার মায়ে’র দিকে।
ছোট্ট মুসা বার বার চেষ্টা করছে সাংবাদিকদের নিউজ বুম গুলো ধরতে। হয়তো ও গুলোকে নিজের খেলনা ভাবছে। সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুসার মা বলেন, ঐ মহিলা আমার বাচ্চা চুরি করচে, আমি সরকারের কাছে বিচার চাই ঐ মহিলার। পুলিশেরা আমাক সহযোগিতা করছে তা না হলে আমি আমার বাচ্চাকে পেতাম না ।
উল্লেখ, গত ২ই অক্টোবর ডায়রিয়া জনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালের নতুন ভবনের শিশু ওয়ার্ডে শিশু মুসাকে ভর্তি করানো হয়।গত গত ৫ অক্টোবর নওগাঁ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে শিশু মুসাকে চুরি হয়ে যায়। চিকিৎসা নিয়ে ক্রমেই মুসা সুস্থ হয়ে উঠছিলো।এসময় তার মা ও দাদি সাথে ছিলেন।মা’ মুসাকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় হাটাহাটি করছিলেন।সাথে অপরিচিত এক মহিলাও মুসার মায়ে’র সাথে হাটাহাটি করছিলেন এবং দুএকটা কথাও বলছিলেন।
ওই মহিলার হাতে শিশু মুসাকে দিয়ে ওয়ার্ডের ভিতরে বাচ্চার প্যান্ট নিতে যান মুসার মা। ওই মহিলা এই সময় কৌশলে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নিরুদ্দেশ যায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে শিশু ওয়ার্ড সহ পুরো হাসপাতালে কান্না ও হৈ চৈ পরে যায়।পরে হাসপাতালের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ থেকে বোরখা পরিহিত এক নারীকে ওই শিশুটিকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর শিশুটি উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ।নওগাঁ পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে চুরি যাওয়ার ১১দিন পর মঙ্গলবার ভোরে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।এবং শিশু মুসার অপহরকারী সেই মহিলা আজিজা বেগম (৪০)কে আটক করা হয়েছে।জানাজায় আটক আজিজা বেগম জেলার বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় নওগাঁ সদর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে শিশুটিকে উদ্ধার সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ননা করেন পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া।
তিনি বলেন, শিশুটি উদ্ধারে পুলিশের বিভিন্ন দল কাজ করেছে। ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগীতায় শিশুটি উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে সুস্থভাবে উদ্ধার করে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি এটাই বড় কথা। তবে আটককৃত মহিলা শিশু পাচারের সাথে জড়িত আছে কিনা বা এর সাথে আরো কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলাও সম্ভব না।আইনি বিভিন্ন প্কৃয়া শেষে নওগাঁ সদর উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের বাসিন্দ শিশুটির বাবা ইসমাইল হোসেন ও মা বৃষ্টি’র কাছে শিশু মুসাকে ফিরিয়ে দেন নওগাঁ সদর থানা পুলিশ।
এসময় সেখানে আরও নওগাঁ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ফারজানা হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সুরাইয়া খাতুন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন, তদন্ত কর্মকর্তা ফায়সাল বিন আহসান সহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা সহ সদস্যবৃন্দ সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।