সালাত প্রসঙ্গ
‘””””””'””””””””””””””””
“নামায” মূলতঃ পার্সি শব্দ, যাকে আরবী ভাষায় “সালাত” বলা হয়। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে এক বার নয়, দু’বারও নয়, বরং ৮২ বার “সালাত” কায়েমের কথা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেই “সালাত” কিনা মুমেন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নির্নয়কারী। আর এই কথাটা আমরা যারা মুসলিম বলে নিজেকে সব সময় প্রচার করি তা আমরা সবাই জানি। এবং এই কথাটা চিরন্তন ভাবেই সত্য!
যেই সালাত বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এতো গুরুত্ব দেয়া হলো, তাহলে কি এই “সালাত”?
আরবী ভাষায় যাকে ” সালাত” বলে জানি, পার্সি ভাষায় তাকে “নামায”ও বলি। তাহলে আমাদের বাংলা ভাষায় “সালাত” তথা “নামায”-এর অর্থটা কি দাঁড়ায়?
বাংলা ভাষায় এর হুবহু অর্থ দাঁড়ায় ” সংযোগ বা যোগ”।
কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে “আক্বিমুস্ সালাতা” তথা “সংযোগ স্থাপন কর”। এখন প্রশ্নো হলো এই সংযোগ কার সাথে স্থাপন করতে বলা হয়েছে, দুনিয়াবী বিষয় রাশির সাথে, নাকি স্রষ্টার সাথে?
দুনিয়াবী বিষয় রাশি তথা দুনিয়াবী চিত্তাকর্ষক চাকচিক্যময় বিষয় বস্তু লাভের মোহ বা নেশায় নিজেকে সর্বদাই জড়িয়ে রেখে যে ব্যক্তি স্রষ্টার সাথে সংযোগ স্থাপন তথা সালাত কায়েম কে অবহেলা করে সে-ই তো আসল দুনিয়া দার মর্দুদ তথা সত্যি কারের মূর্তী পূজারী।
কারন ” মূর্ত” শব্দটি থেকে “মূর্তী” শব্দটি এসেছে, যার অর্থ দৃশ্যমান বিষয় বস্তু। এই দুনিয়াবী বিষয় বস্তু লাভের মোহ বা নেশায় বদ্ধ মাতাল অবস্থায় স্রষ্টার সাথে সালাত তথা সংযোগের চেষ্টা করা একেবারেই বৃথা। কারন মাওলা নিষেধ করে দিয়েছে নেশা গ্রস্থ অবস্থায় সালাত তথা সংযোগ প্রচেষ্টার ধারে কাছেও না যেতে। কারন গেলেও কোন লাভ হবে না!
এখানে যদি কেউ “নেশা” বলতে মদ, গাঁজা, আফিম, হেরোয়িন, ইয়াবা ইত্যাদি কেই বুঝে থাকেন, এতে আমার বলার কিছুই নেই। তবে ধন-সম্পদ লাভের নেশা, ক্ষমতার নেশে, সামাজিক আত্মপ্রতিষ্ঠার নেশা, রূপের নেশা, যৌবনের নেশা সহ নানা প্রকার ভোগের নেশার কথাও আমরা জানি। ছোট্ট একটা উপমা দিতে গেলে দেখি, ধন-তান্ত্রিক পুঁজিবাদের নেশা কি করে ধনী ব্যক্তিদের কে আরো ধনবান করছে এবং অন্য দিকে এর নেগেটিভ প্রভাবে একদল দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বসত ভিটা হাড়িয়ে পথে নেমে ভিক্ষা করছে! এভাবে আরো বহু নেশার কুপ্রভাবের কথা আমরা বলতে পারি।
তাই এই সব নেশা মুক্ত হয়েই সালাত কায়েম করতে হয়।
সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্বাস(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, মহানবী(সাঃ) বলেছেন ” সালাত বেহেস্তের চাবি। আর, সালাতের চাবি তাহারাত(পবিত্রতা)”। তার অর্থ, পবিত্র সালাত বেহেস্তের চাবি। আমরা যদি মনে করি ওযু বা গোসল করলে শরীর পবিত্র হয়ে যায়, তখন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে, আমরা যারা মনে গভীরে দুনিয়াবী বিষয় রাশি মোহ বা নেশাকে গোপনে লালন করছি, যেই নেশার জগতে আমাদের মন আল্লাহ ভুলে গিয়ে দ্বিগ্বিদ্বিগ্ ঘুরপাক্ খাচ্ছে, এই অপবিত্রতা থেকে মনকে কিভাবে পবিত্র করবো? যেহেতু প্রতিটি আমলই পবিত্র মনের পবিত্র নিয়তের ভিত্তিতেই স্রষ্টা কবুল করেন। তাই সালাত কায়েম তথা মাওলার সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য হৃদয়ের পবিত্রতা বাধ্যতা মূলক।
অতি আক্ষেপের স্বরে বলতে হচ্ছে যে সব অজ্ঞ বা হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য ধর্মের ধজাধারী, জান্নাত-জাহান্নামের আারৎদার মোল্লারা সর্বপ্রথম মানুষের আত্মশুদ্ধির ধার না ধেরে সুজা বেহেস্তের রাস্তা দেখায় তারা আসলে নিজেরাও বেহেস্তের রাস্তা চিনে না! বরং কতোগুলো সরল সহজ মানুষকে বিপথে ধাবিত করে। যদি এটা তাদের উভয়েরই তগদির!
মহানবী(সাঃ) বলেছেন ” সালাত মুমেনের মেরাজ”। মেরাজ বলতে আমরা জানি রহস্যলোকে পরিভ্রমন ও মাওলার দিদার লাভ। তার মানে যিনি মুমেন তিনি অবশ্যই মেরাজের মর্যাদার অধিকারী। এখন প্রশ্ন আসে, আমরা সালাত বলতে সামাজিক পরিসরে যা দেখে আসছি সেই সালাত তো এয়াজিদের মতো কুলাঙ্গার থেকে শুরু করে মীর জাফর, মীর সাদিকের মতো জাতীয় পর্যায়ের মোনাফেকেরাও পরেছে, তবে তারাও কি মুমেন হয়ে মেরাজের মর্যাদা পেয়েছে? মূলতঃ সমাজ ব্যবস্থায় সালাত বলতে যেই অনুষ্ঠানটি আমারা সব সময় করতে দেখি উহা আসলেই ওয়াক্তিয়া বা সময় ভিত্তিক সালাত। এই ওয়াক্তিয়া বা আনুষ্ঠানিক সালাত পদ্ধতিটি একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সামাজিক ভারসাম্য পূর্ণতা রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ও দৃষ্ট নন্দন হলেও এই পদ্ধতিতে মাওলার সাথে সংযোগ স্থাপন তথা মেরাজ করা একে বারেই অসম্ভব। কারন এই পর্যায়ের সালাতিদের মনে দুনিয়াবী মোহ বা নেশা কিছুটা হলেও বহাল তবিয়তে বজায় থাকে, এবং অবশ্যই কিছুটা লৌকিকতা বা রিয়া। যেহেতু ওয়াক্তিয়া সালাত হাদিস দ্বারা স্বীকৃতএকটা নিছক অনুষ্ঠান। তাই আল্লাহ এই সকল ওয়াক্তিয়া লৌকিক সালাতিদের “মুসল্লি” স্বিকৃতী না দিয়ে উল্টো ধমকের স্বরে সাবধান করে দিয়েছেন! এবং ঠিক অপর দিকে এও ঘোষনা করে দিয়েছেন “আল্লাযিনা হুম আলা সালাতি হিম দায়িমুন” তথা ” তারাই (মুসল্লি) যারা দায়েমী তথা চিরস্থায়ী সালাতের উপর(দন্ডায়মান)” সুরা মারিজঃ২৩। কারন এই চিরস্থায়ী সালাতের মধ্যে কোনো প্রকার বিরতী বা বিচ্যুতি নাই। তাই প্রকার মুসল্লির দ্বারা কোনো প্রকার অশ্লীলতা করার সুযোগই নাই তথা অসম্ভব। তাই আল্লাহ বলেছেন ” নিশ্চয়ই সালাত সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখে”।
তাই এখন ভাবতে হবে কি করে আত্ম শুদ্ধি অর্জন করে নিজেকে দায়িমী সালাত তথা চিরস্থায়ী সংযোগের ঘরে নিয়ে যাওয়া যায়। আর এর জন্য আমাদের কে অবশ্যই একজন কামেল অলিয়াম্ মুর্শেদের (সুরা কাহাফঃ১৭) নিকট বায়াত হয়ে জেনে নিতে হবে, যে ভাবে গাউসে পাক আব্দুল কাদের জিলানী, বাবা বায়েজিদ বোস্তামী, ইমাম গাজ্জালী ও মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর মতো বিশ্ব বিখ্যাত স্কলার ও ফিকাহ শাস্ত্রে গ্রেজুয়েট আলেমরাও একজন কামেল মুর্শেদ তথা গুরুর নিকট বায়াত বা মুরিদ হয়ে ছিলেন। তারা কি ফিকাহ বুঝতেন না? তবে তারা কেন গুরু ধরলেন? আপনি যদি ওয়াক্তিয়া সালাত ও ওযু শিখতে চান তবে আপনার জন্য বাজারে প্রচলিত ১০ টাকা মুল্যের “নূরানী নাময শিক্ষা” বইটিই যথেষ্ট। আর যদি বুঝতে পারেন, আত্ম শুদ্ধির মাধ্যমে দায়িমী সালাত অর্জন করতে অলিয়াম মুর্শেদের (সুরা কাহাফঃ১৭) প্রয়োজন, তবে চুক্তি ভিত্তিক একজন কামেল মুর্শেদ খুঁজুন। মনে রাখবেন আমাদের নবী পাক (সাঃ) সহ অসংখ্য নবী-রাসুল বাজারে প্রচলিত মাদ্রাসা পাস মোল্লা মুফতিদের দের টাকার জ্ঞান নিয়ে মানব জগতে আসেন নি। (তাফায়েল আজম ফেসবুক ওয়াল।
Discussion about this post