জনজীবনে পুলিশের সম্পৃক্ততা সবসময় সরাসরি প্রত্যক্ষ করা না গেলেও বাহিনীটির প্রচ্ছন্ন কিন্তু সর্বব্যাপী উপস্থিতি সহজেই উপলব্ধ। আমাদের ফেনীর পুলিশও এর ব্যতিক্রম নয়, (দাগনভূঞা পুলিশের কয়েকটা ইতিবাচক কার্যক্রম/প্রশংসনীয় উদ্যোগ)। প্রশাসন থেকে “ফেনীতে যেমন পুলিশ চাই” শিরোনামে জনগণের কাছ থেকে লেখা আহবান করার বিষয়টি তাই একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা বয়ে আনে।
আইনের যথাযথ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ, অপরাধ দমন, রাত্রিকালীন টহলদারি এ জাতীয় কর্তব্য পালনের মাধ্যমে নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিরাচরিত দায়িত্বটি তো প্রথম থেকেই পুলিশ বাহিনীর কাঁধে, এর বাইরেও নাগরিক সমাজের সাথে একটি সহজ, পারস্পরিক বোঝাপড়ামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়। এজন্য ইতিমধ্যে গৃহীত থানাভিত্তিক ‘নাগরিকদের সাথে গোলটেবিল বৈঠক’ কর্মসূচীটির আশু বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি তাছাড়া কেবল প্রাপ্তবয়ষ্ক নাগরিকই নয়, কমবয়সী শিক্ষার্থীদের সাথেও পুলিশের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ গুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নিয়মিত সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে যেখানে শিক্ষার্থীদের শিশুশ্রম, মাদকাসক্তি ও নিরাময়, বাল্যবিয়ের ভয়াবহতা, সাইবার বুলিং ও নিরাপত্তা, ইভটিজিং, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন এবং সাহায্য পাবার উপায়, গুরুত্বপূর্ণ জরুরি নম্বর সম্পর্কে জানানো হবে, এবং বিভিন্ন পদে আসীন ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের কাজ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।
এতে করে কোমলমতি শিশুরা যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব, কর্মপরিধি সম্পর্কে অবগত হবে, নিজেরাও ভুল পথ থেকে দূরে থাকতে ও অন্যকে দূরে রাখতে সচেষ্ট হবে বলে আশা করা যায়। একইভাবে সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক নৈরাজ্য ও অবক্ষয় নিরসনকল্পে পুলিশ বাহিনীর অবিলম্বে সকল ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের একত্র করে নিজ নিজ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে শান্তি ও সহিষ্ণুতার বাণী ছড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং তার নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও যুবসমাজকে বেপরোয়া গাড়িচালনা/রেসিং, অশ্লীল ও মানহীন টিকটক/ইউটিউব ভিডিও তৈরি, মাদকাসক্তি, অনৈতিক ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ইত্যাদি অপরাধ থেকে দূরে থাকার জন্য উৎসাহিত করতে যথাযথ বিনোদন, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের (রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সাহায্য করা, রাস্তা-পার্ক-মাঠ ইত্যাদি জায়গা পরিষ্কার করা, অন্যান্য সমাজকল্যাণ ও গঠনমূলক সংগঠনের হয়ে কাজ করা) বন্দোবস্ত করা, সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য (শিক্ষামূলক অনলাইন কনটেন্ট তৈরি, শিক্ষার্থী/সাধারন নাগরিকদের আত্মরক্ষামূলক কৌশল শেখানো ইত্যাদি) স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা, অনলাইনে ‘ক্লিন-ফিড’ ও অফলাইনে নিয়মিত টহল ও নজরদারি জারি রাখার বিষয়গুলিও বর্তমান সময়ের বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব, পুলিশের পোশাকের ভেতরের লোকগুলো দিনশেষে আমাদেরই আপনজন, আমাদের মতপি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ তাঁদের কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই যার বলে আমাদের সকল দাবি-দাওয়া বা আকাঙ্খিত পরিবর্তনগুলো নিমিষেই বাস্তবতায় পরিণত করতে পারবেন রাজনৈতিক প্রভাব ও পক্ষপাতদুষ্টতাহীন একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশা আমরা যেমন করব, তেমনি এই বাহিনীর সদস্যরা যেন তাঁদের দায়িত্ব সততা,সাহস, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে পালন করতে পারেন, সেজন্যে সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদেরও যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যটুকু পালনে সচেষ্ট হতে হবে তবেই না আমরা পারস্পরিক মেলবন্ধনের একটি সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ গড়তে সক্ষম হব।