শেখ আজাদ হত্যা মামলার এজাহার গ্রহণ করতে ৩০ আগষ্ট পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলা না নেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন আদালত। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার ৩০ আগষ্ট এ আদেশ দেন। আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ সাজ্জাদুল আলম আজাদ ওরফে আজাদ শেখকে প্রকাশ্যে দিবালোকে নির্মামভাবে খুন করা হয়েছে। খুনীরা তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি,জবাই করে আজাদকে হত্যার পর পেট ও বুক চিরে কলিজা ও ফুসফুস বের করে নিয়ে গেছে খুনীরা। ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম নেতা দিনদুপুরে নির্মমভাবে খুন হলেও কোতুয়ালী মডেল থানা কর্তৃপক্ষ এখনো মামলাটি এন্ট্রি করেনি, ফলে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে খুনীরা উল্টো বাদীপক্ষকে হুমকী দিচ্ছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগে জানান। ঘটনার এক মাস পর অবশেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বাদী পক্ষ। রিট আবেদনে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে আদালতে দাখিল করা হয়। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী মাক্তিয়া ফাতেমা ইসলাম ও কামাল উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম। জেড আই খান পান্না বলেন, আদালত হত্যার অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছেন। এজাহার গ্রহণ করা হয়েছে কি-না তা ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেখ আজাদ হত্যা মামলার এজাহার গ্রহণ করার ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি পেয়েছেন বলে কোতুয়ালী মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে এখন কথা বলতে পারছি না, তবে পরে তা জানানো হবে। গত ৩১ জুলাই ময়মনসিংহের আকুয়ার নাজিরবাড়িতে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ আজাদ। তাকে গলা কেটে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতের মা ও স্ত্রীর অভিযোগ, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল পাঠান ও ধর্মমন্ত্রীর ভাতিজা মন্তু বাবুর নির্দেশে আজাদকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার দুই দিন পর গত ২ আগস্ট ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন নিহত আজাদের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার দিলু। মোহিত উর রহমান শান্তসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। কিন্তু এক মাসেও এজাহার নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। দিলরুবা আক্তার দিলুর অভিযোগ, মন্ত্রীর ছেলেকে আসামি করায় মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। তার স্বামীর হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এদিকে মামলা না নেয়ায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহ শহর। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানব্বন্ধন করেছে নিহত আজাদের স্বজনরা। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) নগরীর গাঙ্গিনাপাড় মোড়ের প্রধান সড়ক অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ভুক্তভোগি এই পরিবার। এসময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আজাদের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার, বড় ভাই সালাহ উদ্দিন শেখ, আব্দুল মান্নান ও তার কর্মী শাব্বির শেখ, মাইনুল ইসলাম মিলন, রাপেল প্রমুখ। মানববন্ধন ও সমাবেশে আজাদের স্বজনরা ছাড়াও এলাকাবাসী ও যুবলীগের কর্মীরা অংশ নেন।