সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে চালু করা একটি অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রের সৈকতে গোসল করতে নেমে দুই তরুণ নিখোঁজ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুন) বিকেলে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ দুইজন হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদিরগঞ্জ থানার শানারপাড়া এলাকার খোকনের ছেলে শানার পাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাজমুল হাসান ইমন (১৯) ও একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র রাজ (১৬)। তারা পরস্পর খালাতো ভাই। উদ্ধার করা হয়েছে আহাদ হোসেন (১৯), রবিন (১৯), সজীব ইসলাম (১৮), টুটুল (১৯), প্রিয়াল (১৬), হোসেন (১৭) ও আরিফুর রহমানকে (১৬)।
দুই তরুণের নিখোঁজের পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনকে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, বিকেল তিনটার দিকে দুই তরুণ নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যের একটি ডুবুরি দল পাঠানো হয়েছে। তারা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, জনৈক এমএ কাসেম রাজা নামের প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই একটি কাঠের সেতু তৈরি করে পর্যটকদের কাছ থেকে ১৩০ টাকা করে আদায় করতো। বড় বড় সাইনবোর্ড দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভাটার সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা নয়জন তরুণ সৈকতে গোসল করতে নামে। এ সময় দুইজন ভেসে যায়। সাতজনকে কোনো রকমে উদ্ধার করা হয়। তিনজন বমি করায় তাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বাকিরা সুস্থ আছে। তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর।
আহত কলেজছাত্র সজিব ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় বসবাস করি, ফেসবুকে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন পর্যটন স্পট সম্পর্কে জানতে পারি। বিকালে বাঁশবাড়িয়া বিচে আমরা ৯ বন্ধু গোসল করতে নামি। কিন্তু সাগরের কতটুকু দূরত্বে গভীরতা তা আমরা জানতাম না। এখানে কোনো লাল পতাকা ছিল না গভীরতার। বিচ আছে কিন্তু লাল পতাকা না থাকায় আমি আমার দুই বন্ধুকে হারালাম। সেখানে নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো স্পিডবোট, নেই কোনো বয়া।’
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম বলেন, এখানে পর্যটন কেন্দ্র খোলার জন্য কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন নেই। জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অবৈধভাবে ওই পর্যটন কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। যদি সরকারি অনুমোদন থাকতো তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যটন পুলিশের টহল, জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি থাকতো যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা না ঘটে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক ওই পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার (২২ জুন) সকালেই ওই ঘাট দিয়ে যাতে কেউ সৈকতে নামতে না পারে সে জন্য বাঁশের বেড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুইজন লাঠিয়াল দেওয়া হবে যাতে কেউ ওই দিকে যেতে না পারে। এ ছাড়া এ ঘটনায় অভিযুক্ত তথাকথিত পর্যটন কেন্দ্রের মালিকের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post