জনতার কলাম, সাংবাদিক রামিম দেওয়ানঃ তখন রাত্রি আনুমানিক ৯ঃ৩০ ঢাকা নিউমার্কেট সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে এই দৃশ্যের মূখোমূখি হলাম; ঢাকা শহর একদিকে ধনীদের চাকচিক্য আকাশ ছোয়া দালান, বিরাট বিরাট রেস্তোরা,অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, দামী দামী অসংখ্যগাড়ী আর ঠিক অপর পাশে দারিদ্রতার করুন চেহারা! একপাশে ডাস্টবিনে বর্জিত খাবারের স্তুপ আর একপাশে খাবারের জন্য যুদ্ধ। আমার জানা মতে ২০১৭ সালে এক জরিপে বর্তমান বাংলাদেশে দারিদ্র্য সীমা’র নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২৪.৫ শতাংশ। আমরা এখন স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিতন হয়েছি, এটা আমাদের জন্য অনন্য অর্জন।
কিন্তু প্রশ্নটি এখানে, আমাদের দেশের গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরোধে যে সব নিতি চিত্রায়িত আছে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা কত টুকু? আমি মনে করি ০%।
বাংলাদেশ সংবিধানে ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ এর মধ্য শুধুমাত্র তাদের প্রয়োজনীয় কিছু অনুচ্ছেদ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাগন বেশি সচেতন আর সেটা হলো নির্বাচন। বাকি অনুচ্ছেদ গুলো নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারনটি হলো ক্ষমতা গদি দখলের মন্ত্র। যখন নির্বাচনের সময় আসে তখন দেখতে পাই নেতাদের অতিদরদী চেহারা। তখন নেতাদের কাছে ধনী গরিব সকল সমান দেখা যায়। সকলের ভালমন্দ খোঁজ খবর ও সাধু আচরণ দেখে আপনার এক মূহুর্তে’র জন্য মনে হতে পারে ইহারা কি ভিন্ন গ্রহ হইতে আগমন করিলেন নাকি!? যদি এই চেহারা ক্ষনিক কালের অভিনয় মাত্র বললে কি অন্যায় হবে? সেই সময়-কাল মাত্র নির্বাচন পর্যন্ত। নির্বাচনের পরেই তারা আবার আগের জায়গায় ফিরে যান।তবে এখনো আমার দেশে সৎ ও জনতার নেতা আছেন তবে তাদের সংখ্যা যৎসামান্য। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বাংলার মফিজ মিয়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে,যেমন মফিজ উদ্দিন টাকা জমিয়ে হজ্বে গেলেন, হজ্ব শেষে বাড়ী ফিরলেন সৌদি পোষাক- লম্বা জুব্বা, মাথায় পাগড়ী, মেহেন্দী রঙ দাড়ি।এবং আচরনেও বেশ অতিভদ্রতা, দেখলেই লম্বা সালাম। কিন্তু কিছু দিন যেতেনা যেতেই মফিজ আবার আগের বেশে ফেরত আসতে দেখা যায়, দেখা যায় লুঙ্গী আর শার্ট,মুখে বাঙ্গালী গালী।তাহলে মফিসকে দেখে আমরা কি উপলব্ধি করতে পেড়েছি? আসল কথা ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গেলে ধানে বানে। নির্বাচন পরবর্তী নেতাগন সাধারণ জনগনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তোমাদের উন্নয়নের দায়িত্ব শুধুই সরকারের। তারা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে জনসেবা,সাধারণ মানুষের উন্নয়ন করা যায় সেটা তারা ভুলে যান। তবে ব্যতিক্রম নিজেদের উন্নয়ন করতে একদমই ভুল করেন না।
বর্তমান খবরের কাগজ দেখলেই আপনাদের ধারণা হয়ে যাবে।এখন তো খালবিলেও টাকার বস্তা পরে থাকতে দেখা যায়। হাত তলা’র নেতা ক্ষমতায় গিয়ে ছাদতলায় চলে যান।বাড়ী হয় গাড়ী হয় ব্যাংকে ব্যালেন্স হয়, আরও কত্ত কি! কিন্তু যাদের সমর্থন নিয়ে তার এই উত্থান তাদের দৃশ্য এই ছবির মতই থেকে যায়। একটা উপমা দিই – এক মহাজন তার চাকরকে তার সমস্ত সম্পদের দায়িত্ব দিলেন। ক্ষেত খামার, গরুর পাল, ছাগলের পাল, আঙ্গুরের বাগান। এবং তিনি তার চাকরকে বললেন আমি ৫ বছরের জন্য দেশের বাহিরে যাব তুমি এই সব দেখাশুনা করবে। এখানেই তোমার পরিবার নিয়ে খাবে থাকবে।চাকর শর্ত মেনে শফত করে দায়িত্ব গ্রহন করলো। অতঃপর ৫ বছর পর মহাজন ঘুরে এসে দেখলেন তার সব কিছুই অর্ধেক হয়ে গেছে। মহাজন চাকরকে ডেকে বললেন এই সব কিছু নষ্ট হলো কি ভাবে? এবার চাকর উত্তেজিত কন্ঠে উত্তর দিলেন -তার আমি কি জানি! আমি কি আমার বাড়ী থেকে নিয়ে এসে পূরন করবো নাকি? যা আছে এখানেই। মহাজন বললেন,আমি কি তোমার বাড়ী থেকে এনে দিতে বলেছি।আমি তোমাকে যা দিয়েছিলাম শুধু তার হিসাব চেয়েছি। আজ তোমার বাড়ী হয়েছে, গাড়ী হয়েছে।আগে ত তোমার কিছুই ছিলনা। আমি তোমার বাড়ীর থেকে আমার ঘাটতি পূরন করতে বলিনি। বরং আমার সম্পদ নিয়ে তোমার বাড়ীতে মজুদ করে আমার মজুদ ধংশ করে তুমি আমানতের বিনাশ করেছ সেই কথা বলেছি।এই তো ক’দিন পূর্বেই তুমি আমার আশ্রিতা ছিলে, তাহলে আমার সম্পদে ঘাটতি আর তোমার মজুদ হলো কি করে? আজ বর্তমান ঠিক তাই অবস্থা,জনগনের সমর্থন দিয়ে একজন ব্যাক্তি আমরা জনতার প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সংসদে পাঠায়,আমাদের চাওয়া পাওয়ার কথা সরকারের কাছে তুলে ধরতে।
রাষ্ট্রে’র উন্নয়নে জনতা তাদের রক্ত ঘামের অর্থ কর আকারে প্রদান করি রাষ্ট্রিয় রাজস্ব বৃদ্ধি করতে। যেন আমাদের সন্তানেরা শিক্ষা অর্জন করতে পারে,তাদের কর্ম সংস্থানে যোগ্যতা অনুপাতে কর্মও পারিশ্রম পায়।আমাদের মৌলিক চাহিদা তথা অন্য বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা ও নিরাপদ জীবন পাই। কিন্তু ৫ বছরে তার সম্পদ পাহাড়সম হয়ে দাড়ায়।প্রতিনিধির জীবন যাত্রা হয়ে উঠে রাজকীয় কিন্তু সংবিধানের নিতিতে “ জনতা মালিক” থেকে যায় ঠিক যেমন ছিলো। নুন আনতে পানতা ফুরায়। আজ যদি বাংলাদেশের সমস্ত নেতা-আমলা-প্রশাসনি কর্মকর্তা ও তাদের পৃষ্টপোষকতায় গড়ে উঠা রাতারাতি শিল্পপতি কৌটি পতিদের কামানো অবৈধ্য সম্পদের হিসাব করে রাষ্ট্রিয় কোষাগাড়ে জমা রাখা যায়, দেখা যাবে বাংলাদেশ হয়তো রাতি স্ব-নির্ভ র হয়ে উঠবে এবং নিজের টাকায় ১০০টি পদ্মা সেতু হয়ে যাবে নিমিশেই।
আর সেই টাকা যদি দারিদ্র বিমোচন,বেকারত্বে উন্নয়নের জন্য পরিকল্পত খরচ করা হয় তবে ছবিতে থাকা এই মাকে হয়তো আর কখনই তার সন্তানদের নিয়ে এই ফুটপাতে আর দেখা যাবে না। এই দেশে সরকার পতনে বিরোধী দলের বোমা বানাতে টাকার অভাব হয়না,টাকার অভাব হয়না নির্বাচন ঠেকাতে।সরকার পতনের আন্দোলনে টাকার অভাব হয়না।টাকার অভাব হয়না হাজার হাজার পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দেশের মানুষের আগুনে পুলিয়ে হত্যা করতে। আবার বিরোধী দলকে দাবাতে,পরিকল্পনা টাকার অভাব হয়না। দলীয় নেতাদের রাতারতী শীল্পপতি বনে যেতে টাকার অভাব হয়না। মিছিল মিটিং আর জনসভায় লোক ভাড়া করতে টাকা অভাব হয়না।নির্বাচনে ব্যানার পোষ্টার প্রচারে টাকার অভাব হয়না।এমপি মন্ত্রীদের নিউ মডেলের গাড়ী কিনতে টাকার অভাব হয়না। একরাতে ক্যাসিনো নামক জুয়ায় কৌটি কৌটি টাকার পুজিতে টাকার অভাব হয়না! সুইচ ব্যাংকএ হিসাব নং খুলতে টাকার অভাব হয়না। অভাব হয় শুধু জাতীর ভবিষৎ গঠনে!! পর্ব ২