নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :আলু পেঁয়াজ সবজি মাছসহ নানান কৃষি পন্য রপ্তানীতে নওগাঁ জেলার অন্যতম উপজেলা আত্রাই এর সুনাম ও খ্যাতি যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।সেই সাথে সোনালী আঁশ (পাট) সেই তালিকায় অন্তভুক্ত হয়েছে বহু বছর আগে। আত্রাইয়ের ঐতিহ্য সুনাাম আরো বৃদ্ধি করেছে পাট চাষ ও রপ্তানির জন্য ।
তখন ও আত্রাইয়ে রাস্তা ঘাট ছিলনা।আত্রাই নদীর ছিল চলাচলের এক মাত্র পথ। দুর দুরান্ত থেকে পাল তোলা সহ বড় বড় নৌকা নদী পথে আসতো আত্রাই সহ আহসানগঞ্জহাট ঘাট এলাকায়। হাটের পাট বোঝাই নৌকা ছুটে যেত তার গন্তব্যে।
আর আত্রাইয়ে ছিল পাটের গুদাম।সেই থেকেই পাটের জন্য আত্রাই বিখ্যাত হয়ে উঠে। চলতি মৌসুমে পাটের বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময় মত বৃষ্টিপাত হওয়াতে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে পাট চাষীরা পাট আরোহন করে পানিতে পচানী দেওয়া পাট পরিস্কার করা ধোয়া শেষে শুরু করেছেন পাট বিক্রি। তবে ব্যাপক বন্যার কারণে পাট ক্ষেতের আশেপাশে পর্যাপ্ত জলাশয় থাকলেও পাট ধোওয়া শ্রমিক সংকটের কারণে পাট চাষীরা বড়ই বেকায়দায় পড়েছিলেন। বর্তমানে আত্রাইয়ে দু’বেলা খাবার দিয়ে একজন পাট ধোয় শ্রমিকের মজুরী সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। সারা দিনে একজন শ্রমিক ১৮ থেকে ২০ বিড়া পাট ধুতে পারে।
এছাড়া অনেকে কৃষক চুক্তি ভিত্তিক পাট ধোয়া শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস ও পাট চাষী সূত্রে জানা গেছে, আত্রাইয়ে এবার কমবেশি সব এলাকাতেই পাটের চাষাবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার একশত পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়ে মোট পাটের চাষ হয়েছে ২শত ০৭ হেক্টর জমিতে।
প্রতি হেক্টরে গড়ে ৯ বেল উৎপাদনের লক্ষ হিসাবে এখানে মোট উৎপাদনেরর লক্ষমাত্রা নির্ধারিন করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন , বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক আহসানগঞ্জহাট সরেজমিনে বেশ কিছু ব্যবসায়ী ও হাট মালিকের কথা বলে জানা যায়। আহসানগঞ্জহাটের নানা তথ্য। হাট মালিক নুরুল আলম বলেন, আত্রাইয়ের এই হাটে শুধু পাট ই নয় সব ধরণের ফসল সহ রকমারী জিনিস পাওয়া যায় এই আহসানগঞ্জহাটে। স্থানীয় ব্যবসায়ী কবির হাছান বলেন,এবারের পাট মানে ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী আহসানগঞ্জহাটে ছুটে আসছেন পাট ক্রয় করতে। ঢাকা খুলনা সিরাজগঞ্জ পাবনা সহ দেশের দূর দূরান্ত থেকে তারা আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জহাটে এসে ট্রাক বোঝাই করে পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আত্রাইয়ের মধ্যে আহসানগঞ্জহাট পাটের জন্য বিখ্যাত। আহসানগঞ্জহাটে পাট কিনতে এসেছেন সিরাজগঞ্জের বেপারী আজিজ জানান, তারা বাপ দাদার আমল থেকে পাটের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি নিয়মিত আহসানগঞ্জহাট থেকে পাট কিনে থাকেন। প্রতি হাটে তিনি ট্রাক করে পাট কিনে থাকেন। গত বছরের তুলনায় এবার পাটের দর কিছুটা বাড়তি বলে তিনি জানান।
এবার পাটের দর মানভেদে ২ হাজার থেকে ২৩শ টাকা পর্যন্ত। আরেক বাবসায়ী জানান, অনেক আগে থেকে পাটের ব্যবসা করছি।অনান্য হাটের চাইতে আহসানগঞ্জহাটে সব রকম পাট পাওয়া যায়। আর এই হাটে পাট কেনাও যায় মান দেখে দেখে। এবার অন্য বছরের তুলনায় পাটের দাম একটি বেশি। পাট বিক্রি করতে আসা উপজেলার দমদমা গ্রামের জামাল জানান,এবারের পাট চাষ একটু বিঘ্নিত হলেও পাটের ভালো দাম থাকায় আমরা অনেকটা খুশি। এভাবে আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জহাট থেকে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে ট্রাক ভর্তি হয়ে পাট চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার জানান,বর্তমানে পলিথিন যে ভাবে মহামারী আকার ধারন করছে। এবং যত্রতত্র ভাবে পলিথিনির ব্যবহার বাড়তে থাকায় পরিবেশ ক্রমশই বিষময় হয়ে ওঠছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য পাটের বহুমূখী ব্যবহার ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আত্রাইয়ে আমরা পাট চাষীদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে থাকি । যাতে পাটের উৎপাদন আগামীতে আরো বৃদ্ধি করা যায়।