নাগরপুর প্রতিনিধিঃবাংলাদেশ রূপ বৈচিত্রের দেশ। এদেশে অতীত কাল থেকেই হাজার ধরনের সংস্কৃতি পালন করা হয়। যার একটি নিদর্শন হলো মৎশিল্প।
বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। ‘মৎ’ মানে মাটি আর শিল্প’ মানে সুন্দর সৃষ্টিশীল বস্তু তাই মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মকে মৎশিল্প’ বলে, এবং যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জরিত তাদের বলা হয় কুমার।
কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়তি মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন। এই শিল্পটি হল বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম একটি শিল্প যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে।
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে শনিবার (ঈদের দিন) কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, হাতে গুণা কয়েকজন কুমার দোকান মেলে বসেছে। কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৎ শিল্প। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলার বহু বছরের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।
শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এসব তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন হারাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। এখন বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে দেখা মিলে মাটির এসব তৈজসপত্রের। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন মেলায় এবং বাংলা সালের বিদায় ও বরণ উৎসবে। ঈদ ও মেলায় ছোট ছোট বাচ্চাদের মাটির তৈরি হরেক রকম খেলা সামগ্রী পাওয়া যেত এখন আর তা চোখে পড়ে না।
মেলায় আগতদের হাতে হাতে স্থান পেত এসব মাটির জিনিস। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এই শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়লেও নতুন করে মৃৎশিল্পের আর একটি শাখা উন্মোচিত হয়েছে। সেটি হলো নান্দনিক মৎশিল্প। এ শাখার মৎশল্পীরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী ও শিল্প কর্ম তৈরি করে থাকেন, ইংরেজিতে একে বলা হয় পটারি শিল্প। এরা টেরাকোটা বা মৎফলকে খোদাই করে সুন্দর সুন্দর শোপিস তৈরি করেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তি, অলঙ্কার, নকশি পাত্র, ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করছেন।ঢাকার অনেক দোকানে এসব শৌখিন মৎসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।