একাত্তর বাংলাদেশ
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • আর্ন্তজাতিক
  • অর্থনীতি
  • সারাবাংলা
  • চট্টগ্রাম সংবাদ
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • বিবিধ
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • সাহিত্য সংস্কৃতি
    • লাইফস্টাইল
  • ভিডিও
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • আর্ন্তজাতিক
  • অর্থনীতি
  • সারাবাংলা
  • চট্টগ্রাম সংবাদ
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • বিবিধ
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • সাহিত্য সংস্কৃতি
    • লাইফস্টাইল
  • ভিডিও
No Result
View All Result
একাত্তর বাংলাদেশ
No Result
View All Result
Home জাতীয়

আমাদেরকে মা বলে ডাকার অধিকার দিয়ে গেছেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশকাল : 27/02/18, সময় : 8:36 pm
0 0
0
0
SHARES
11
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

আমি আমার বক্তব্যের প্রথমেই শ্রদ্ধা জানাই মহান ভাষা আন্দোলনে সেই সকল শহীদ, যাঁরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদেরকে মা বলে ডাকার অধিকার দিয়ে গেছে। শহিদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিকসহ আমাদের শহিদ, যাঁদের মহাত্যাগের বিনিময়ে আজকে বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। আমি শ্রদ্ধা জানাই আমাদের মহান নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। যিনি বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবার আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং যাঁর আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি, স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ পেয়েছি। আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, আমাদের জাতীয় চার নেতা এবং ৩০ লক্ষ শহিদ এবং ২ লক্ষ মা-বোনকে।

জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত অর্থাত্ ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২.০১ মিনিটে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে বলেছিলেন, “১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল মাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।” জাতির পিতার এই মহামূল্যবান বক্তব্য থেকে এসে যায় যে ভাষা আন্দোলন আমাদের পথ দেখিয়েছিল আমাদের জাতিসত্তা প্রকাশের সংগ্রামের।

’৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচিতে একটা সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। সেই সাহিত্য সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হলো যে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত উর্দু। তখনি কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, কয়েকজন ছাত্র মিলে মিছিল করে তখনকার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তারা গিয়েছিল এটার প্রতিবাদ জানাতে। সেখানেও কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন, তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। এবং সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একটি সভা ডাকলেন। তমুদ্দুন মজলিসসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠন তারা মিলে সিদ্ধান্ত নিল ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে ‘ভাষা দিবস’ হিসেবে ১১ মার্চ ঘোষণা দেওয়া হলো। সেই দিন ধর্মঘট ডাকা হয়। এবং তার পূর্বে ১৯৪৮ সালের ৪ঠ জানুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছাত্রদের দিয়ে ছাত্রলীগ নামে একটি সংগঠনও গঠন করেছিলেন। এবং সেই ছাত্রলীগকে দিয়েই কিন্তু সংগঠন, মানে ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু এবং এই ১১ই মার্চ এ ধর্মঘট করতে গিয়ে আমাদের তখন অনেক নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হন, সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও ছিলেন।

১৬ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একটা সভা হয়। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং সেখানে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এই সংগ্রাম করতে গিয়ে বারবার কিন্তু তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন মুক্তি পেয়েছেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় একটি ভুখা মিছিল হয়। তখন লিয়াকত আলী খান পূর্ববঙ্গে আসার কথা, সেই সময় এই আন্দোলনে গিয়ে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়ে গেলেন। তারপর কিন্তু অনেকে মুক্তি পেয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুক্তি পাননি। কিন্তু কারাগারে থেকেও তিনি যখনি কোর্টে অথবা চিকিত্সার জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসতেন তখনি কিন্তু তিনি ছাত্রনেতাদের সাথে সাক্ষাত করতেন। এই সাক্ষাতকারের একটা পর্যায়ে, তিনি ছাত্রলীগের তখন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নইমুদ্দীন সাহেব এবং খালেক নেওয়াজ, তাঁদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে ছাত্রদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন এবং সেখানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যেন সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়, সে নির্দেশনাও তিনি দিয়েছিলেন।

কাজেই এভাবেই তিনি ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তাঁর দাবি আদায়ের জন্য অনশনে যাবেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি অনশন করা শুরু করেন। অনশনরত অবস্থায় তাঁকে ফরিদপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাঁকে ফরিদপুর জেলে নিয়ে যায় ঐ সময় ওয়াইজ ঘাট থেকে স্টিমার ছাড়ত, নারায়নগঞ্জে স্টিমার থামত, তিনি আগেই খবর দিয়েছিলেন যে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ যেভাবে হোক ওনার সঙ্গে যেন দেখা করে। সেখানেও তিনি বসে তাদেরকে চিরকুট পাঠান এবং অনেকের সাথে সাক্ষাত হয়, সেখানেও নির্দেশ দিয়ে যান যে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। ভাষার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে, সেই নির্দেশনাও তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন।

’৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি যখন মিছিল বের হয়, সেখানে গুলি চলে এবং আমাদের শহিদরা রক্ত দিয়ে এই ভাষা আন্দোলনকে একটা জায়গায় নিয়ে যান। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়। নির্বাচনে তখন যুক্তফ্রন্ট এ.কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, তাঁরা সকলে মিলে যুক্তফ্রন্ট করেন। সেই যুক্তফ্রন্ট জয়ী হলেও সেই সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কারণ পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে নানারকম চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে এবং সেই সরকার বাতিল করিয়ে ৯২/ক ধারা দিয়ে সেখানে এমারজেন্সি ডিক্লেয়ার করে, আবার সবাইকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার গ্রেফতার হন।

এরপর ’৫৬ সালে এসে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। সেখানে অনেকগুলি শর্ত মেনেই তাঁকে হতে হয়েছিল। যাই হোক, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে পাকিস্তানের জন্য প্রথম সংবিধান রচনা করেন। এই সংবিধানে তখন উর্দুর সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রাভাষা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয় এবং সেটা আপনারা শুনেছেন যে, শর্ত সাপেক্ষে। সেটা আমরা জানি। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আসার পরেই কিন্তু যে শাসনতন্ত্র পাকিস্তানে রচিত হয়েছিল, সেখানেই বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। আর সেই সরকার ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়, ছুটি ঘোষণা করা হয়, সরকারি ছুটি পালন করবার জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে, প্রকল্প নিয়ে কাজও শুরু করে।

’৫৮ সালে আইয়ুব খান তখন মার্শাল ‘ল’ জারি করে। আইয়ুব খান ছিল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, তিনি একাধারে সেনাপ্রধান আবার সেই সাথে নিজেকে রাষ্ট্রপতিও ঘোষণা দেয়, ক্ষমতা দখল করে। আবার আমাদের ভাগ্যে নেমে আসে সেই অমানিশার অন্ধকার এবং বাংলাকে আবারও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেসময় আপনারা শুনেছেন, এর আগে আমি নিজেও বলেছি যে বাংলা ভাষা চর্চা করা যাবে না, বাংলায় কথা বলা যাবে না। আবার কবিতাগুলিও, আপনারা কিছুক্ষণ আগেই শুনলেন যে, কবিতাগুলিকেও নাকি মুসলমানি ভাষা দিতে হবে! আর রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না, রবীন্দ্রনাথ বন্ধ করে দেওয়া হল। রবীন্দ্র সংগীত শোনা যাবে না। আমার মনে আছে, আমাদের বাংলা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা, রফিক স্যার এখানে উপস্থিত আছেন, তখন কিন্তু সমস্ত শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কাজেই সেই দিন থেকে নজরুলের কবিতাকে মুসলমানি শব্দ দেয়া হচ্ছে, আর রবীন্দ্রনাথ একেবারে বাতিল। এই হলো তাদের মানসিকতা। তো সেখানে দেখা গেল যে যখন হাই স্যারকে ডেকে মোনায়েম খান সাহেব বলল যে, কী মিয়ারা আপনারা বসে খালি রবীন্দ্র সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত করেন ২/৪ খান রবীন্দ্র সংগীত নিজে লিখে ফেলতে পারেন না। উনি (হাই সাহেব) খুব ভদ্র লোক ছিলেন। আমি যখন ভর্তি হই, তখন উনি বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। উনি খুব বিনয়ের সাথে বলেছিলেন যে, স্যার, আমরা তো লিখতে পারি কিন্তু সেটাতো রবীন্দ্র সংগীত হবে না, আমি লিখলে ওটাতো হাই সংগীত হয়ে যাবে। এইভাবে আমাদের ভাষার উপর বারবার আঘাত এসেছে।

এই আঘাতটা কিন্তু সেই আমাদের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত, বারবারই আমরা দেখেছি। কখনও রোমান হরফে বাংলা লিখতে হবে, কখনও আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে। এভাবে বারবার এক-একটা সমন জারি হয়েছে আর আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু সবসময় আন্দোলন করেই গেছে এর বিরুদ্ধে। কারণ প্রত্যেকটা অর্জনই কিন্তু সংগ্রাম করে, আন্দোলন করে আমাদেরকে অর্জন করতে হয়েছে। প্রত্যেকটা অর্জনের পেছনে আমাদের কিন্তু অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে।

জাতির পিতা যে কথাটা বলেছিলেন, যে আমাদের ভাষা আন্দোলন এটা শুধু মাত্র যে ভাষার জন্যই তা নয়; এখানে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংষ্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ আন্দোলন ছিল। এই ধারাবাহিকতায় কিন্তু জাতির পিতা একটা জাতিকে ধীরে ধীরে আন্দোলনের পথ বেয়ে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যে ৬ দফা দিয়েছিলেন, সেই ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সোপান। এটা পাকিস্তানিরা বুঝতে পেরেছিল, যে কারণে ৬ দফা দেবার সাথে সাথে তাঁকে গ্রেফতার করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে আমাদের ছাত্রসমাজ, দেশের জনগণ ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটিয়েছিল এবং বাধ্য করেছিল এই মামলা প্রত্যাহার করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। মুক্তিটা তখন তিনি পেয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি।

আমি জানি না, উনার জীবনীটা পড়লে খুব অদ্ভুত লাগে। ’৫২ ভাষা আন্দোলনের যে সংগ্রাম তিনি ’৪৮ সাল থেকে শুরু করলেন এবং একের পর এক গ্রেফতার হলেন। এরপরে যখন ’৪৯ সালে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন তারপর কিন্তু আর মুক্তি পান নাই। ’৪৯, ’৫০, ’৫১ এরপর ’৫২ সালে যেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি যখন তিনি অনশনরত অবস্থায় প্রায় মৃতপ্রায়, তখন তিনি মুক্তি পান।

আবার ’৬৯ সালে যখন তাকে গ্রেফতার করা হল, তারপর তিনি মুক্তি পেলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ সালে। ’৬৬ সালে গ্রেফতার করা হয়, ৬৬ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা দেওয়া হল এবং অনেক সাজাও দেওয়া হল। তারপর ’৬৮ সালে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল। ১৮ জানুয়ারি যখন নিয়ে যাওয়া হয়, আমরা পরিবারের কেউ জানি না কোথায় নিয়ে গেছে, কেমন আছেন, বেঁচে আছেন কিনা? কোনো খবরই আমরা পাইনি। যখন আগরতলা মামলা শুরু হয়, ঐ কোর্টে প্রথম দেখা। কাজেই, এভাবে বারবার যে আঘাত এসেছে, তারপরও তিনি কিন্তু একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে, বাঙালি জাতির স্বাধিকার আদায়, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। আর সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই আজকে আমরা এই বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।

স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি দিলেন সাথে সাথে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হল। যাহোক, তারপর তিনি মুক্তি পেলেন, আমরা বিজয় অর্জন করলাম ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এরপরে জাতির পিতা মুক্তি পেলেন ৮ জানুয়ারি ’৭২ সালে, ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফিরে এলেন। তো ফিরে এসে যে কাজটি তিনি করেছেন যে, একটা প্রদেশ ছিল তাকে একটা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের মানুষের ঘরে পৌঁছায় এবং একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় তিনি হাতে নিলেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেলেন, এই সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে নিয়ে যাওয়া। এবং ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে, একদম মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি নিয়েছিলেন। যাতে অর্থনৈতিক উন্নতিটা দ্রুত হয় এবং বাঙালি জাতি যেন বিশ্ব সভায় একটা মর্যাদার আসন পায়। ঠিক যখন এই অর্থনীতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় চলে এসেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চলতে শুরু করেছে, দেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের, দেশের মানুষ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে এবং ঐ যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠে যখন অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে; সব থেকে বড় কথা, মিত্র শক্তি ভারতের সেনাবাহিনী যারা আমাদের সাথে ছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে, অনেক রক্ত ঝরেছে, কিন্তু সেই মিত্রশক্তিকেও ফেরত পাঠিয়েছিলেন। জাতির পিতার অনুরোধে ইন্দিরা গান্ধী তাদেরকে ফেরত নিয়ে যান। আমরা দেখেছি যখন বাংলাদেশ একটু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী তখন কিন্তু ’৭৫ সালে আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য যে ঠিক তখনি আঘাতটা আসল, জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং গোটা পরিবারকে একই সাথে তিনটা বাড়ি আমার মেজো ফুপু, সেজো ফুপু, ছোটো ফুপু প্রত্যেকের বাড়িতে আক্রমণ করল, প্রতিটি বাড়ির সদস্যকে হত্যা করল এবং এরপরে জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করল। তারপর আপনারা ধীরে ধীরে নিজেরাই শুনেছেন, প্রত্যেকটা জিনিসের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে গেল। ঠিক পাকিস্তানি ভাবধারায় আবার এই নামগুলি পরিবর্তন করে এবং ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর প্রথম যে ঘোষণা, সেখানে কিন্তু বাংলাদেশকে ঐ ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে এক পর্যায়ে ঘোষণা দিয়েছিল। তারপর যখন বুঝল যে, এটা মানুষ গ্রহণ করবে না, তখন আর ও কথা দ্বিতীয়বার উচ্চারিত হয়নি। কিন্তু প্রথম ঘোষণাটা ওভাবে এসেছিল অর্থাত্ এটাকে যেন পাকিস্তানের একটা প্রদেশ বানাবারই একটা প্রচেষ্টা হয়েছিল।

এরপর ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি এবং যারা এসেছিল তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী। তারা ঐ আইয়ুব খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ক্ষমতায় এসেছে এবং দেশকে তারা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে না, বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বাংলাদেশ যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করেছে, সেই বিজয়ী মনোভাবটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া এবং যেই শক্তিকে আমরা পরাজিত বললাম, ঐ তাদেরই প্রতি খোশামুদি, তোষামুদি চাটুকারিতা আমরা দেখেছি। তাদের দেখলেই যেন বেঁহুশ হয়ে পড়ার মতোন অবস্থা ছিল, যারা ক্ষমতায় ছিল।

যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মার্শাল ল অডিন্যান্স দিয়ে বন্ধ করে তাদেরকে মুক্ত করে তাদের দল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।

অনেকেই যখন বলেন যে, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিল। তাদের বহুদলীয় গণতন্ত্র মানেই তো ঐ যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ করে দেওয়া, যাদের সাজা হয়েছিল তাদের মুক্ত করা। কাউকে প্রধানমন্ত্রী, কাউকে মন্ত্রী, কাউকে উপদেষ্টা, তাদের হাতে আমার লাখো শহিদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দেওয়া। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার না করে পুরস্কৃৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া। কী দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসে কর্মরত তাদের পরিচয় কী? তাদের পরিচয় হচ্ছে, যার নেতৃত্বে এ স্বাধীনতা সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারী, খুনী। আমার মনে আছে, পোল্যান্ডে যখন পাঠানো হয় একজন খুনীকে, পোল্যান্ড সরকার তাকে গ্রহণ করে নাই। বলেছিল শেখ মুজিবের হত্যাকারীকে আমরা এখানে কোনো পদে আসতে দেব না। কাজেই, আমরা দেখেছি যে কিভাবে দেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে নস্যাত্ করে দেওয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর আমরা সরকারে আসি। আমরা আসার পর প্রচেষ্টা চালিয়েছি দেশের উন্নয়নে এবং আজকে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেই প্রস্তাবটা যখন করা হয়েছিল, আপনারা শুনেছেন যে, সালাম আর রফিক, তারাই আরো কয়েকটি দল-দেশের প্রতিনিধি মিলে ঐ যে ভালবাসি মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাব নেই এবং সেখানে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোতে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। আজকে আমরা যখন ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, পৃথিবীর বহু দেশের বহু জাতির মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। কাজেই সেই মাতৃভাষাগুলিকে সংরক্ষণ করা, সেই মাতৃভাষাগুলির চর্চা করা, মাতৃভাষাগুলির নমুনা রাখা এবং একটা ভাষা জাদুঘর, আমরা কিন্তু সেই জাদুঘর তৈরি করেছি। এই প্রতিষ্ঠানটা আমি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আর তারা তৈরি হতে দেয়নি, সেখানেই বন্ধ করে রেখেছিল। আমি ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার সেটা প্রতিষ্ঠা করি। কাজেই একদিক দিয়ে বোধহয় ভালো, কারণ আমি এসে আমার হাতে শুরু ছিল, আবার আমরা এসেই সেটাকেই প্রতিষ্ঠা করেছি। আজকে সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন মাতৃভাষা আমরা সংগ্রহ করছি, সেখানে গবেষণার সুযোগ আছে এবং হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলিকেও আমরা এখানে সংরক্ষণ করছি। ভাষা জাদুঘর একটা আমরা তৈরি করে দিয়েছি। মনে হয়, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশেরই আজকে দায়িত্ব পড়েছে মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করার।

আমি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে জানলাম যে, একটা মূল সাবজেক্ট আমরা নিই অথবা অনার্স নিতাম। কিন্তু সাথে সাথে ২টি বিষয় আমরা সাবসিডিয়ারি হিসেবে নিই। আমি বিষয়টি জানতাম না যে, আমরা যখন অনার্স করতাম তখন বলত সাবসিডারি এখন বলে মেজর অর মাইনর। কিন্তু বাংলা ভাষা নাকি শেখা যায় না, নেওয়া যায় না। এটা আমি জানি না, আমার মনে হয়, এ বিষয়ে ইউজিসির সাথে, বা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আলোচনা করতে হবে, যে এটা কেন? বাংলা ভাষার প্রতি এই অবহেলা কেন?

আর আমরা ব্যাপক হারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছি, কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা হবে না, বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না, এটাতো হতে পারে না। এটা কেন হবে? আরেকটি বিষয় খুব সঠিকভাবে বলে যাই, মাত্র কিছুদিন আগে আমাকে একজন একটা বিয়ের কার্ড দিলেন, বিয়ের কার্ডটা পড়ে আমি খুব খুশি হলাম এবং তাকে ধন্যবাদও জানালাম। তিনি আমাদের সচিব ছিলেন। আমি ধন্যবাদ জানালাম এজন্য যে, তার বিয়ের কার্ডটা বাংলা ভাষায় রচনা করেছে। নইলে এটা ঠিকই, আমাদের স্যার যে কথা বলেছেন বা সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাহেব যা বলেছেন একথা সত্যি, প্রত্যেকটা বিয়ের কার্ড হয় ইংরেজি ভাষায়। আমি ঠিক জানি না কেন হয়? অনেকে যখন নিয়ে আসত আমি জিজ্ঞেস করতাম যে, ইংরেজি ভাষায় কেন? দাওয়াতের কার্ড বা বিয়ের কার্ড কেন ইংরেজি ভাষায় লিখতে হবে কেন? এটার সাথে আমি ঠিক জানি না, মর্যাদার কোনো বিষয় আছে কিনা! এটা কিন্তু ব্যাপকভাবে মনে হয় যেন এটা একটা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমরা বাংলা ভাষায় লিখব না কেন? দাওয়াতের কার্ডটা লিখতে পারি না কেন? এই দৈন্য কেন দেখাতে হবে? এটা আমিও বুঝি না। (অংশ)

অন্য ভাষা শিখার বিপক্ষে কিন্তুু আমরা না, ভাষা শিখতে হবে। আজকে সারা বিশ্বটা যেহেতু প্রযুক্তির প্রভাবে, আজকে বিশ্বটা কিন্তু এক হয়ে গেছে। সেই জন্য বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রাখতে গেলে আমাকেও অন্য ভাষা শিখতেই হবে। কিন্তু অন্য ভাষা না শিখতে পারলে আমরা উন্নত হতে পারব না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ জাপানিজরা কিন্তু জাপানিজ ভাষায় কথা বলে বলে তারা সারা বিশ্বে এক সময় সব থেকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জাতি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছিল, তারা কিন্তু সব সময় নিজের ভাষায় কথা বলত। এখনো কিন্তু জাপানিজ ভাষাই তারা ব্যবহার করে। তবে ভাষা শিখার ব্যাপারে আমি একেবারে বিরুদ্ধে না, যে যত বেশি ভাষা শিখতে পারবে, অবশ্যই আমরা সেটা চাই। আমি এটাই চাইব, যে আমাদের দেশে যেমন ইংরেজি এখন একটা আর্ন্তজাতিক ভাষার মাধ্যম হয়ে গেছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কিন্তু, এই ইংরেজি ভাষাটা এখন শিখছে, আগে যারা শিখত না তারাও শিখছে, তারাও কিন্তু এ ভাষার চর্চা করছে। এ ভাষায় কথা বলছে। হ্যাঁ, সেটা আমরা জানব। যখন আমাদের আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে কথা বলতে হবে, আমরা বললাম। খুব ভাল কথা কিন্তু আমার নিজের দেশে ভাষার জন্য, আমাদের ভাষা শহিদদের রক্ত দিয়ে, রক্তের অক্ষরে মাতৃভাষার মর্যাদা দিয়ে গেছে, আমরা সেটা শিখব না কেন? আমরা সেটা বলব না কেন? বা আমরা সেটার চর্চা করব না কেন? সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন? সেটাই হচ্ছে মূল কথা?
[২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত ভাষণের অংশবিশেষ সংগ্রহকৃত ]

ShareTweetPin
Previous Post

সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ঃ বাদশাহ সালমান

Next Post

মিয়ানমারে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেঃ যুক্তরাষ্ট্রে

Next Post

মিয়ানমারে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেঃ যুক্তরাষ্ট্রে

হাট বাজারের ইজারা নিয়ে মেয়র আমিনুলকে অবরুদ্ধ

কৃষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশক-সম্পাদকঃশেখ সেলিম
চট্টগ্রাম অফিস :
পাঠানটুলী রোড, নাজিরপোল, চট্টগ্রাম।
মোবাইল: 01768-214512, 01960557400
ই-মেইল : [email protected]

একাত্তর বাংলাদেশ

আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে লিখি

“আপনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জানান, আমরা তা প্রকাশ করব নতুন প্রজন্মের স্বার্থে”
বিঃদ্রঃ- মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের যে কোন বিজ্ঞাপন বিনা খরচে প্রকাশ করা হয়।
সহযোগিতায়: মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবার কল্যাণ ফাউন্ডেশন |

Copyright©2018: দৈনিক একাত্তর বাংলাদেশ II Design By:F.A.CREATIVE FIRM

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • আর্ন্তজাতিক
  • অর্থনীতি
  • সারাবাংলা
  • চট্টগ্রাম সংবাদ
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • বিবিধ
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • সাহিত্য সংস্কৃতি
    • লাইফস্টাইল
  • ভিডিও

Copyright©2018: দৈনিক একাত্তর বাংলাদেশ II Design By:F.A.CREATIVE FIRM

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In