৭১ বাংলাদেশ প্রতিনিধিঃদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র, নগরের ৬৫ লাখ মানুষের পানি সরবরাহের আধার কর্ণফুলী রক্ষায় ‘বিনি সুতার মালা’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী আয়োজন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ মে) সকাল নয়টায় নগরের সদরঘাট থেকে শুরু হয় চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারব্যাপী অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির আয়োজনে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে তিন দিনব্যাপী ‘সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার’ প্রথম দিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘বিনি সুতার মালা’।
নদীর উভয় পাড়ের ৩০টি ঘাটে এবং নদীপারের জনবসতি ঘিরে আলোচনা, নাচ, গানের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীকে দখল-দূষণমুক্ত রাখতে নদী ব্যবহারকারীদের সচেতন করতেই এ আয়োজন।
ভাসমান নৌযানে তৈরি মঞ্চে সদরঘাট, চরপাথরঘাটা, নয়াহাট, কালুরঘাট, বোয়ালখালী, লাম্বুরহাট, গোচরা বাজার, গোডাউন ঘাট, ইছাখালী ঘাট, গোদালাঘাট, চৌধুরী হাট, দোভাষী বাজারে আয়োজন করা হয় উপজাতীয় নাচ, আলোচনা, আঞ্চলিক গানের।
ডায়মন্ড সিমেন্টের সৌজন্যে আয়োজিত ‘বিনি সুতার মালা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়েটের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, কর্ণফুলী দখল ও দূষণে মানুষের চেয়ে নদী ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ভার বেশি। নদীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা কখনো সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। কর্ণফুলীতে নোঙর করা শত শত জাহাজের পোড়া তেল প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলছে।
তিনি বলেন, নগরের ৬৫ লাখ মানুষের সৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ওয়াসা নীরব দর্শক। নদীর উভয় তীরের শতাধিক শিল্পকারখানা, বাজার, ঘাটের মাধ্যমে নদী দূষণ হচ্ছে। কর্ণফুলী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার করার বিকল্প নেই।
খরস্রোতা না হলে অনেক আগেই কর্ণফুলীকে বুড়িগঙ্গার ভাগ্য বরণ করতে হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্ণফুলীর জোয়ার-ভাটা রাসায়নিক ও মানুষ্য সৃষ্ট বর্জ্য সাগরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সাগরের দূষণ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির চেয়ারম্যান আলীউর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অব্যবস্থাপনা কর্ণফুলীর প্রাকৃতিক রূপ ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কর্ণফুলীর উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাস্তবায়ন না করলে জোরদার আন্দোলন করা হবে।
ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের ব্রান্ডিং এবং কমিউনিকেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী রক্ষায় ডায়মন্ড সিমেন্ট সব সময় সাম্পান মাঝিদের সঙ্গে ছিল আগামী দিনেও থাকবে। কর্ণফুলী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে কথাটি এখন আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলীর সঞ্চালনায় এবং সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার।
বক্তব্য দেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মির্জা মোহাম্মদ ইসমাইল, চরপাথরঘাটা সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাফর আহমদ,শিল্পী গীতা আচার্য, শিল্পী মিলন আচার্য, ইছানগর সগরঘাটা সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আলী হায়দার, কর্ণফুলী নদী মাছ ও মালবাহী সমিতির সভাপতি মীর আহম্মদ,চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি জিন্নাত আলী প্রমুখ। মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন পলিয়ন বোমাং ও তার দল।
দ্বিতীয় দিন বুধবার ( ৯ মে) বেলা ১১টায় নগরীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে সাম্পান শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় অভয়মিত্র ঘাট থেকে চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠে সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতিমেলা অনুষ্ঠিত হবে।