সম্পাদকীয়ঃকিশোর অপরাধ প্রতিকারে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত। সঠিক পন্থায় শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ না হওয়ার কারণেই মূলত কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয়। এ ছাড়াও যে সব কারণে এই ব্যাধির সৃষ্টি হয়, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কিশোর অপরাধ প্রতিকার করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে ইসলাম সর্বজনস্বীকৃত প্রতিরোধমূলক ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে তা প্রতিকার করেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ইসলাম বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। আর সংশোধনমূলক ব্যবস্থায় নিয়েছে বাস্তবসম্মত নানা পদক্ষেপ।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলতে বুঝায় শিশু-কিশোরদের মধ্যে যাতে প্রথম থেকেই অপরাধ প্রবণতার সৃষ্টি না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করা। যেসব কারণে শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দেখা দেয়, সেগুলোকে আগে থেকে দূর করাই এ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। মানবজীবন কতগুলো স্তর বা ধাপের সমষ্টি। জীবন পরিক্রমায় এই স্তর বা ধাপ অতিক্রম করে অগ্রসর হতে হয়। শিশু-কিশোরদের জীবন-প্রকৃতি বড়দের থেকে আলাদা।
তাদের চাহিদা এবং বিকাশকালীন প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাও ভিন্নতর। বিধায় পরিবেশ পরিস্থিতি শিকার হয়ে তারা যেন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য যেসব কার্যকারণ অপরাধকর্মে লিপ্ত হতে তাদেরকে উৎসাহিত করে অথবা তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় কিংবা তাদেরকে তা করতে বাধ্য করে, সেগুলোকে চিহ্নিত করে অপরাধ সংঘটনের পূর্বেই তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছে ইসলাম।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর কতিপয় আবশ্যকীয় দায়িত্বারোপ করেছে, তাহা নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে ….
কিশোর অপরাধ প্রতিরোধের উত্তম স্থান হলো পরিবার। জন্মের পর শিশু পারিবারিক পরিবেশে মাতা-পিতার সংস্পর্শে আসে। শিশুর সামাজিক জ ীবনের ভিত্তি পরিবারেই রচিত হয়। তাই তাদের আচার-আচরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এ জন্যই ইসলাম শৈশবকাল থেকে ঈমানের শিক্ষা, ‘ইবাদতের অনুশীলন, ইসলামের যথার্থ জ্ঞানার্জন ও নৈতিকতা উন্নয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে পরিবারের উপরে। যাতে করে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ শিশু-কিশোররা অপরাধমুক্ত থাকতে পারে। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে এবং তাদের পরিজনদের অপরাধমুক্ত জীবনযাপন করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।
উক্ত আয়াতের তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে প্রখ্যাত মুফাস্সির ইমাম কুরতুবী (রহঃ) লিখেছেন যে, আমাদের সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার পরিজনদের ইসলামী জীবন ব্যবস্থা, সমস্ত কল্যাণকর জ্ঞান ও অপরিহার্য শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া আমাদের কর্তব্য।
অনুরূপভাবে মহানবীর(সঃ) হাদীসেও শিশু-কিশোরদের সুষ্ঠু বিকাশ ও সামাজিকীকরণে পরিবারের দায়িত্বের বিষয়টি নির্দেশিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেকেই নিজ পরিবারের লোকদের তত্ত¡াবধায়ক এবং সে নিজের অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আর স্ত্রী তার স্বামীর সংসার ও তার সন্তানাদির অভিভাবক। তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাসূলুল্লাহ (স:) আরো বলেছেন, “পিতা তার নিজের সন্তানকে যা কিছু দান করেন তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ভাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।
অতএব, বলা যায় যে, কিশোর-কিশোরীর আচরণ ও ব্যক্তিত্বের উন্নয়নে পরিবার সর্বাধিক অনুকুল পরিবেশ যোগায়। বিশেষ করে এক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকা অপরিসীম। কেননা তারাই শিশু-কিশোরের সামনে বহির্বিশ্বে বাতায়ন প্রথম উন্মুক্ত করে দেয় এবং সন্তানের অনুপম চরিত্র গঠনের কার্যকর অবদান রাখতে পারেন।
ঈমান “ঈমান শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস করা। পরিভাষায় রাসূলুল্ঃ ( স:) তাঁর মহান রবের থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা মনেপ্রাণে গ্রহণ ও বিশ্বাস করাকে ঈমান বলে। মানব জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ মানবজাতিকে ঈমানের দিকে দা’ওয়াত দিয়েছেন। জাগতিক জীবনের প্রকৃত শান্তি, বিশুদ্ধ জীবনযাত্রা, সামগ্রিক কল্যাণ ও পারলৌকিক উক্তি ইত্যাদি সবকিচুর সফলতা প্রকৃত অর্থে ঈমানের বিশুদ্ধতার উপরই নির্ভরশীল। ঈমান হলো সকল প্রকার অপরাধ প্রতিরোধক। অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ঈমানের ভূমিকা অপরিসীম। যার হৃয় মনে ঈমান সক্রিয় ও জাগরুক থাকে, সে কখনোই কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান লংঘন করে অপরাধে লিপ্ত হতে পারে না।
তবে ঈমান যেমন মানুষকে আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত বানায়, তেমনি কুফর বানায় শয়তানের অনুসারী। যারা নিজেদেরকে শয়তানের অনুসারীতে পরিণত করবে তারাই শয়তানের প্ররোচনায় সকল প্রকারের পাপকর্ম ও অপরাধে লিপ্ত হতে বাধ্য হবে।
আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না। কেননা যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণের নীতি গ্রহণ করবে, শয়তান তাকে অশ্লীলতা ও অপরাধমূলক কর্মেরই আদেশ করবে।কেবলমাত্র ঈমানই পারে মানুষকে খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে।
ছবিঃসম্পাদক মোঃ শেখ সেলিম
Discussion about this post