লেখক, মুহাম্মদ এরশাদ আলীঃ১৫ আগস্ট ১৯৭৫সাল ।দীর্ঘকাল পরিক্রমার চিরাচরিত নিয়মেই বিশেষ বিশেষ দিবসগুলো নির্দিষ্ট সময়েই আমাদের সামনে এসে দৃশ্যমান হয়।
তেমনি একটি বিশেষ দিবস ১৫ আগষ্ট।
১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে অন্ধকার এক সময়ের মুখোমুখি হয় ত্রিশ লক্ষ্য শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ। গর্বের ইতিহাস আছে যে জাতির, সেই জাতিরই এক কলঙ্কময় অধ্যায় এই দিন, বাংলার সর্বশেষ্ঠ সন্তানকে বুলেটে বিদ্ধ করার দিন।
আজকের দিনে শোকের সাথে স্মরণ করছি ইতিহাসের এই মহানায়ককে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আজ চলো জেনে আসি ১৫ আগস্টে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দেখা এক নেজামের কথা। ব্যালকনি প্রিয় নেজাম রাতের বেলায় ব্যালকনিতে দাড়িয়ে নিশিতি রাতের তারকা গুলো গুণতো। প্রতিদিনের মতো নিজাম ১৪ আগস্ট রাতে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে। ভিতর থেকে শব্দ আসছে ঘুমের ঘরে প্রবেশ করার,
কিন্তু তিনি না একটু দেরিতে প্রবেশ করে ঐ দিন। ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ প্রতিদিনের মতো ভিড় বঙ্গবন্ধুর বাসার গেইট, মাঝে মাঝে দলবেঁধে ছাত্ররা আসছে কথা বলে চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু পরের দিন যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিষেক অনুষ্ঠানে স্বাধীন দেশের প্রথম চ্যান্সেলর হয়ে। ঐ দিন সন্ধ্যার পর ভিড় করতে থাকে। রাত ৯টার কিছুক্ষণ পরে কালো মার্সেডিজে চড়ে আসলেন এক ব্যক্তি, রাত বাড়ার সাথে সাথে নিরব নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
রাত ১২ টায় আরো একজন। চোখ নামিয়ে আসছে নেজামের ব্যালকনিতে আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে চলে যায় ঘুমের ঘরে। ঘরির কাঁটা ৫ টা ছুঁই ছুঁই হঠাৎ কানে আসছে বিকট গুলির শব্দ ঘুম ভেঙে যায় নেজামের। ঘুম থেকে লাভ দিয়ে উঠে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দেখকে পাই বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে এক সেনা কর্মকর্তা অস্ত্র উঁচিয়ে বাকি সেনাদের অশ্লীল ভাষায় গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
শুরু হয় গুলির বিকট শব্দ। একটানা প্রায় এক ঘন্টা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই, মাঝে মাঝে ২/১ টা করে মার্টারের শব্দ কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা। মাঝ কানে বঙ্গবন্ধুর হুংকার শোনা গেল তোরা কে, তোরা কে, কাছে এসে বল, কি হয়েছে, কেন এসেছিস? প্রশ্নের উত্তর পায়নি বঙ্গবন্ধু। গোলাগুলির প্রথমেই কামাল সাহেব গেইটে এসে জানতে চাই কী ব্যাপার? জিজ্ঞেস করতে না করতে তার কপালে গুলি করে, সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শাহাদাত বরণ করে। এভাবে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাকি সদস্যদের হত্যা করে। গোলাগুলির সময় বঙ্গবন্ধুর ব্যালকনিতে দাড়িয়ে একদল ট্রপার্স নেজামের বাসার পাহারাদারকে ৮টা আংগুল দেখিয়ে বলেছিল নেই।
মানে ৮ জনকে হত্যা করলো ঐদিন রাতে। এক সময় গোলাগুলি কম হতেই শোনা গেল নারী কন্ঠের আত্বচিৎকার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল শেখ জামালের স্ত্রী পারভীন জামাল ও শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামালের। সাথে খুকুর তীব্র কন্ঠস্বর। তীব্র চিৎকারে বোঝা গেল বাঁচার শেষ আকুতি মিনতি করছিল ঐ নিশ পাপ মানুষ গুলো। ১০ বছরের বাচ্চা শিশু রাসেলের হাত ধরে নেমে আসে বাড়ির চাকর তাকেও নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সবসময় একটা কথা বলতেন, স্বাধীনতা এনে দিলাম এবার রক্ষা করার দায়িত্ব তোমাদের সকলের।
শেষ বিন্দু রক্ত আমি এদেশের জন্য দিয়ে যাব। আমি কোনদিন আপস করিনি, জীবন দিতে হলেও দেব তবুও আপস করবনা। সেই বাঙালির মহানায়ক তাঁর কথাই রেখে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সেই কথায় রেখে গেছেন।
মহানায়কের সুরে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বলতে চাই আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তাঁর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে এক যুগে কাজ করার আহবান জানাই। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সব অপশক্তির বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা।
অস্ত্র নয় কলম, দুর্নিতী নয় দেশের সেবা। শেখ মুজিবর রহমান তাঁর দেশকে ভাল বেসেছিলেন, ভাল বেসেছিলেন তাঁর বাঙালী জাতিকে। আসুন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাতেই হাত রেখে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি।