৭১ বাংলাদেশ প্রতিবেদকঃবাসের সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নামিয়ে দেয়ার কথা বলে বাসে বসতে বলেন বাসের কন্ট্রাকটর। ছাত্রী প্রথমে নিজ আসনে বসে থাকলেও পরক্ষণেই খেয়াল করেন বাসের সব যাত্রীরা নেমে গেছেন।
বাসের হেলপার আর সুপারভাইজার বার বার তাকাচ্ছিলেন ছাত্রীটির দিকে। এবার ছাত্রীটির সন্দেহ হওয়ায় তিনি বাস থেকে নেমে যেতে চান। কিন্তু নামতে গেলেই বাসের দরজা আটকে দেয় হেলপার।
ছাত্রীটি চিৎকার করে উঠেন। ফোন করতে চাইলে মোবাইল ফোন ও ব্যাগ কেড়ে নেন একজন। একজন হিজাব ধরে টানছিলেন। চলন্ত বাসে ছাত্রীটি চিৎকার করেন, কান্না করতে করতে বাসের দরজায় লাথি মারেন। চলন্ত বাসে এই দৃশ্য সড়কের পথচারীদের নজরে আসে। বিষয়টি বুঝতে পেরে বাসের চালক বাস থামিয়ে এক পর্যায়ে ছাত্রীটিকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সেই ছাত্রী চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষার ঘটনাটি- ফেসবুকে এভাবেই বর্ণনা দেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা এলাকায় ঘটে এমন ঘটনা। বাসটি ছিলো সোহাগ এক্সপ্রেস লি. এর (স্থানীয় পরিবহন)। তবে ছাড় পায়নি সেই ধর্ষকচক্র। শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ শেষ পর্যন্ত এই বাসের চালক হেলপার এবং কন্ট্রাকটরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সোহাগ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব- ১৫-৬০৭৭ নম্বরের বাসের চালক এহসান করিম (২৭), সুপারভাইজার আলী আব্বাস (৩৫) ও হেলপার মো. ভূট্টো।
রোববার দুপুরে নগরীর দামপাড়াস্থ সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে চলন্ত বাসে ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্ঠা এবং এর সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আমেনা বেগম।
প্রেস ব্রিফিং-এ অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি আসার পর নগর পুলিশ কমিশনারের সামাজিক উদ্যোগ ‘হ্যালো কমিশনার’ পেইজের মাধ্যমে এটি পুলিশ কমিশনারের নজরে আসে।
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে ডিবি’র সাইবার ক্রাইম টিম ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে। পরে ঘটনার ভিকটিমের সাথে কথা বলে এবং ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধান করে অভিযুক্ত বাস এবং এর চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে শনিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এই অভিযানে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট, ডিবি’র নর্থ টিম একযোগে কাজ করে বাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্ঠাকারীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পিআর অ্যান্ড আইসিটি) আবু বকর সিদ্দিক, আসিফ মহিউদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।