মোঃ ফয়সাল এলাহী ঃজীবন বলী বলেন ছোটবেলা থেকে বলীখেলা দেখতাম। খুব ভাল লাগতো। সেই ভাল লাগা থেকে বলীখেলায় অংশ নিতে নিজেকে তৈরি করতে থাকি। ২০০৯ সালে আমি বলী খেলায় প্রথমবার অংশ নিই। সেই থেকে আজোবধি বলীখেলায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছি। রানার্সআপের পাশাপাশি কয়েক জায়গায় চ্যাম্পিয়নও হয়েছি। কিন্তু এই প্রথম আমি ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার নয় বছরের স্বপ্নপূরণ হলো
নগরের লালদীঘি মাঠে বুধবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলার ১০৯তম আসরের চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজারের চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম প্রকাশ জীবন বলী শিরোপা হাতে নিয়ে এসব কথা বলেন।
এর আগে প্রায় ১৫ মিনিট তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ফাইনাল খেলায় কুমিল্লার শাহজালাল বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
জীবন বলী বলেন, ‘গত ৫ বছর থেকে এই জব্বার মিয়ার বলীখেলার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিচ্ছি। গতবছর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছি। স্বপ্নছিলো একদিন জব্বার মিয়ার বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হবোই। সেই লক্ষে দেশের বিভিন্ন বলীখেলায় অংশ নিতে থাকি। আর দৈনিক তিন বেলা ভাত ও দুই বেলা নাস্তার পাশাপাশি এক কেজি করে গরুর দুধ খেয়ে নিজেকে তৈরি করতে থাকি। এছাড়াও সিনিয়র বলীদের খেলার কৌশলগুলো আয়ত্ত করতে থাকি।’
এবছর আমার স্বপ্নপূরণের বছর উল্লেখ করে সুঠাম দেহের অধিকারী জীবন বলী আরও বলেন, ‘এবছর সাতকানিয়ার মক্কার বলীখেলা, পটিয়ার ভাটিখাইনে বলীখেলা ও পাবনা জেলায় অনুষ্ঠিত বলীখেলায় আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এছাড়াও কক্সবাজারে ডিসি কাপের সেকেন্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। যেইদিন থেকে বলীখেলায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছি, সেই থেকে আমার স্বপ্ন ছিল জব্বারের বলীখেলায় একদিন না হয় একদিন চ্যাম্পিয়ন হবোই। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হলো। যদিও ফাইনালে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কুমিল্লার শাহজালাল বলী আমাকে বেশ কয়েকবার আঘাত করেছে। রেফারি বারবার সতর্ক দেওয়ার পরও সে আমার মাথায় জোরে আঘাত করেছে। পায়ে চাপ দিয়েও আঘাত করেছে। পরে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ খেলায় রেফারি আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।’
কক্সবাজারের চকরিয়ার মগবাজার কোর্টসেন্টার এলাকার মুছা আকবরের ছেলে জীবন বলী। পেশায় একজন চায়ের দোকানদার। তার সংসারে এক মেয়ে আছে।
অন্যদিকে, জব্বার মিয়ার বলীখেলার ১০৯তম আসরের রানার্সআপ হয়েছেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। যিনি গত ১৪ এপ্রিল নগরের সিআরবিতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত সাহাবুদ্দিনের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।বলীখেলার রেফারি মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘প্রায় ১৫ মিনিটের প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ফাইনাল খেলায় জীবন বলী এগিয়ে ছিলো। কুমিল্লার শাহজালাল বলী খেলায় তিনবার ফাউল করেছে। নিয়ম ভেঙে জীবন বলীকে মাথায় জোরে আঘাত করেছে শাহজালাল বলী। শেষে চকরিয়ার জীবন বলীকে আমরা বিজয়ী ঘোষণা করেছি।
এর আগে সেমিফাইনালে মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেন বলীকে হারিয়ে কুমিল্লার শাহজালাল বলী, উখিয়ার জয়নাল বলীকে হারিয়ে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলী ফাইনালে উন্নীত হন।
এবারের আসরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ৮৬ জন বলী অংশ নেন। প্রথম পর্বে নতুন বলীদের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় ২০ বছর থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সী বলীরা অংশ নিতে দেখা গেছে।
২০১৭ সালে জব্বারের বলীখেলার ১০৮ তম আসরে উখিয়ার শামছু বলীকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রামুর দিদার বলী।
২০১৬ সালে ১০৭তম আসরে জব্বারের বলীখেলার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে রামুর দিদার বলী ও উখিয়ার শামছু বলী কেউ কাউকে নির্ধারিত সময়ে হারাতে না পারায় সিলেকশন পদ্ধতিতে শামছু বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল।
Discussion about this post