চট্টগ্রামবাসীর কাছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশে উন্নয়ন হয়। একমাত্র আমরা যদি নৌকা মার্কায় ভোট পাই তাহলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে।
বুধবার (২১ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে ওয়াদা চান। বলেন, আপনারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেবেন কি-না, হাত তুলে ওয়াদা করুন। তখন নেতাকর্মীরা হাত তুলে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, আমরা উন্নয়ন করি। আর বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে দেশকে পিছিয়ে দেয়। বিগত নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। খালেদা ও তার দুই ছেলে কালো টাকা সাদা বানিয়েছে। তাদের পাচারের টাকা বিদেশে ধরা পড়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কারণেই এই দেশ বিধায় সবার আগে তাদের অধিকার। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি সবাই সর্বাগ্রে অধিকার ভোগ করবে। সে কারণে চাকরিতে আমরা কোটার ব্যবস্থা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই তো এই চাকরি করতে পারছেন, সুতরাং তাদের ছেলে-মেয়েরা এ সম্মান পাবেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার দিয়ে সরকার তা পূরণ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, পুরো চট্টগ্রামে বর্তমান সরকার ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করছে। শিক্ষা, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমরা ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি, যেন তাদের সন্তানেরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া কোরআনের নির্দেশও মানেনা। এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ না করতে কোরআনে নির্দেশ রয়েছে। তিনি তাও মানেননাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা তো আওয়ামীলীগ দেয় নাই। মামলা দিয়েছে তাঁর পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই মঈনুদ্দিন ফখরুদ্দিনরা। আর কোর্ট যখন রায় দিয়েছে তিনি কোর্টের রায়ও মানেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগন দুর্নীতিবাজ আর জঙ্গিবাদের সাথে নেই। বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ জঙ্গিবাদের স্থান নেই । তিনি বলেন, গ্যাস বিক্রির মুচলেখা আমরা দিইনাই। খালেদা জিয়াই ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেখা দিয়েছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে আর উন্নয়ন হয়নি। বিএনপি জামায়াত জোট সরকার দেশকে পঙ্গু করেছিল। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ করে উন্নয়নের রাজনীতি আর বিএনপি করে মানুষ মারার রাজনীতি। আন্দোলনের নামে তারা দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ২০১৪ -১৫ সালে বিএনপি জামায়াত জোট ৫ শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল।
উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নতশীল দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলা করতে পারবেনা বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যাদের ঘর নাই আমরা তাদের ঘর করে দিবো। যাদের ঘর করার মতো সক্ষমতা আছে কিন্তু জমি নাই আমরা তাদের জমি দেবো। বাংলাদেশের একটি মানুষও ঘরবাড়ি ছাড়া থাকবে না। না খেয়ে থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘এক বছরে আমরা ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যেন তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা বিনা আমানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যেন নিজেই চাকরি ব্যবস্থা করতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি আর অর্থ পাচারের দায়ে খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে। তাদেও পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এমেরিকা এবং সিঙ্গাপুরে তাদের অর্থ পাচারের ঘটনা ধরা পড়ে।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া তার কালো টাকা সাদা করেছে। অস্ত্রেও ঝনঝনানিতে দেশ মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছিল। পাচারকালে ১০ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রাম ধরা পরেছিল।
বাংলাদেশ কোন বিদেশির কাছে হাত পেতে করুনার পাত্র হবেনা বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দক্ষিন চট্টগ্রামের মানুষের প্রতিদ আহবান জানান।
দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, গনপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ড.হাসান মাহমুদ,সামসুল আলম চৌধুরী এমপিসহ নগর উত্তর দক্ষিন জেলার নেতৃবৃন্দ ।্