হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কক্সবাজার প্রতিনিধি:কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর ও উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অদক্ষ এবং কমবয়সী চালক ও যাত্রীদের অসচেতনতা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। অদক্ষ ও কমবয়সী চালকেরা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন সড়কে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছে চাঁদের গাড়ি (জিপ), মাইক্রো, হায়েস, সিএনজি-মাহিন্দ্রা, টমটম, মিনি টমটম ও অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন প্রকার যাত্রীবহনকারী পরিবহন।
সূত্র জানায় এই সব গাড়িগুলো থেকে মাসোহারা নিচ্ছে টেকনাফে দায়িত্বরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ । কিন্তু দেশের আনাচে-কানাচে এবং সর্বস্তরে যখন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ রব উঠেছে, তখন এসব গাড়ির মালিকগণ অনিরাপদ বা অদক্ষ ও কমবয়সী চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছে।
ফলে সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তার মূল কারণ কমবয়সী ও অদক্ষ চালক এবং যাত্রীদের অসচেতনতা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট, ফিটনেসবিহীন, অদক্ষ ও কমবয়সী চালক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে টেকনাফ পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন সড়কে। বড়-ছোট সড়কগুলোতে আশঙ্কাজনকহারে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি, পাশাপাশি অদক্ষ ও কম বয়সী চালকেরা প্রতিনিয়ত লঙ্গন করছে ট্রাফিক আইন। এদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা মাসোহারা নিচ্ছে টেকনাফে কর্মরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ ।
সূত্র আরো জানায়, টেকনাফ পৌরসভায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এসব পরিবহনগুলোতে বিভিন্ন প্রকার নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মনিটরিং না থাকার কারণে সমস্যা দিন দিন বিরাট আকার ধারণ করছে। চালকেরা সামান্য ভাড়ায় যাত্রী ওঠানামার জন্য নিয়মিত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে।
ফলে ওভারটেক, রাস্তার মাঝখানে অবৈধভাবে দীর্ঘ সময় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা , ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী বহন, কম বয়সি ছেলেদের হাতে টমটম ও মিনি টমটমসহ নানান কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ভয়াবহ যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা। চলাচলের রাস্তাগুলোর মধ্যে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের বেশির ভাগ চালকেরা অদক্ষ, অনভিজ্ঞও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এরা ভুয়া লাইসেন্স, রুট পারমিট সংগ্রহ করে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চালিয়ে যাচ্ছে।
অথচ তারা জানে না যানবাহন চালানোর নিয়মনীতি। এমনকি যানবাহনে চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও এ নিয়মের ধার ধারে না এসব অদক্ষ চালকরা। প্রথমে তারা বিভিন্ন যানবাহনের সহকারী হিসেবে কাজ নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়, গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করে। সুযোগ হলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। কোনো রকমে গাড়ি চালাতে পারলে পরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে বিআরটিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এরা ভুয়া লাইসেন্স সংগ্রহ করে। এসব অনিয়মের কারণে প্রতিদিন কোনো না কোনো সময় পথচারী ও যাত্রীরা এসব চালকদের দ্বারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
যাত্রীদের অভিমত, টেকনাফ পৌরসভার অলিগলিতে যে সড়ক গুলো রয়েছে, সেখানে বেশি ভাগ কম বয়সি চালকদের হাতে টমটম, মিনি টমটম ও অটোরিক্সা। এই অদক্ষ ও কম বয়সি চালকদের কারনে টেকনাফ পৌর সড়ক গুলো দিয়ে চলাচল করতে খুবেই কষ্ট হচ্ছে। মাঝে মধ্যে দেখা যায় অদক্ষ ও কম বয়সি চালকদের অবৈধ নামে-বেনামে সংগঠন রয়েছে। তাদের সেই সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা মাসোহারা নিয়ে যাচ্ছে টেকনাফে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
এই সব ট্রাফিক পুলিশদের কারনে টেকনাফে অদক্ষ ও কম বয়সি চালকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এই বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সু-নজর দেওয়ার দরকার বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। টেকনাফ উপজেলার অধিকাংশ মিনিবাস, মাইক্রো-হাইয়েস, ডামপার, জিপ-চান্দের গাড়ি, সিএনজি, মোটরসাইকেল, টমটম ও অটোরিকশা চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ড্রাইভিং এর স্বয়ং সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা নেই। এই অরাজগতা নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক নেতাদের চাপের মুখে তা হয়ে ওঠে না বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। তাই সচেতন মহলের দাবি, সড়ক এবং পরিবহনের সংশ্লিষ্ট আইন কার্যকর বাস্তবায়ন করে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।