৭১ বাংলাদেশ ডেস্কঃজাতীয় সংসদে ১৯ সেপ্টেম্বর পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আরো আলোচনার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সাথে তিন মন্ত্রীর বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে।পাশাপাশি শীর্ষ সাংবাদিক সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজে এবং ডিআরইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আইনটির বিষয়ে মতবিনিময়ে অনুরূপ মতৈক্যে পৌঁছান মন্ত্রীবর্গ।
রোববার দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু’র সভাপতিত্বে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর উপস্থিতিতে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা শেষে তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের একথা জানান ।
সভাশেষে তথ্যমন্ত্রী সম্পাদক পরিষদকে আলোচনার আহ্বানে সাড়া দেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সংবিধান সমুন্নত রাখা, গণতন্ত্রের প্রসার ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপোয়। এ অবস্থায় আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও কতিপয় ধারা সম্পর্কে আপত্তি সরকার আমলে নিয়েছে। সেজন্যই এ আলোচনার সূত্রপাত।’
‘২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারই তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন গঠন করেছে’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে ডিজিটাল আপদ-বিপদ-উৎপাত থেকে জনগণ ও দেশকে রার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিকল্প নেই। কারো বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো মিথ্যা অপবাদ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার মতো জঘন্য অপরাধ বা ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত করে এমন কিছু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার মতো ঘৃণ্য কাজের শাস্তির বিধান থাকতেই হবে। এজন্যই এ আইন, গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোন আইন নয়।’
‘তারপরও এ বিষয়ে ভিন্নমত বা আপত্তি-উদ্বেগ থাকলে আলোচনার মাধ্যমেই তা নিষ্পত্তির জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে’ জানান হাসানুল হক ইনু।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এ আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা সবাই একমত। কিন্তু এ আইন যেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ুণœ না করে সেটিও দেখতে হবে। আইনের ৮, ২১ এর অংশ বিশেষ, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ যে উদ্বেগ জানিয়েছেন, তা আগামীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে।’
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম এসময় তথ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীবর্গ ও তথ্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এ আইনের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ লিখিতভাবে জানিয়েছি। সবাইকে আইনটি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। তথ্যমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজনের বিষয়েও আমরা একমত। কিন্তু সংসদীয় কমিটির সাথে সম্পাদক পরিষদের তৃতীয় বৈঠকটি না হওয়া দুঃখজনক। আইনটি সংশোধনের অনুরোধ জানাচ্ছি।
সম্পাদক পরিষদের সদস্যের মধ্যে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মতিউর রহমান, মতিউর রহমান চৌধুরী, নুরুল কবীর, ইমদাদুল হক মিলন, নাইম নিজাম, এ এম এম বাহাউদ্দিন, এম সামসুর রহমান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, জাফর সোবহান ও মুস্তাফিজ শফি বৈঠকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
এদিন বিকেলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকে এ বৈঠকে তথ্যমন্ত্রীর সাথে ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী যোগ দেন।
বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সহ-সভাপতি খন্দকার মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী এবং ডিআরইউ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সহ-সভাপতি গ্যালমান শফি এসময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে তাদের খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন এবং পেশাগত দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর এর অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদপে নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবুয়াল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সভাদ্বয়ে উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post