জনতার কলামঃধর্ম হলো পবিত্র একটি শব্দ। যার যার ধর্ম তার নিকট পবিত্র। সব ধর্মের মূল বক্তব্য শান্তি, শৃঙ্খলা রক্ষা করা। অপর ধর্ম ও অনুসারীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো কোনো ধর্মের আদর্শ উদ্দেশ্য হতে পারে না। ধর্ম মানুষ ও সমাজকে শৃঙ্খলা শেখায়। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, মমাত্মবোধ জাগ্রত করে। এ উপমহাদেশে বহু ধর্মের মানুষের একত্রে বসবাস। এসব দেশে ধর্মে ধর্মে মানুষে মানুষে কখনো কখনো ধর্মীয় বাদানুবাদ হতে দেখা যায়। ধর্মীয় সম্প্রীতি কোনো কোনো সময় উগ্রতায় রূপ নিতেও এ অঞ্চলের মানুষ দেখছে। রাজনীতিতে ধর্মের কতিপয় বিষয় এনে জনগণের সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার পরিবেশও তৈরী হয়।
বাংলাদেশ এবং আশপাশের দেশসমূহে মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের একযুগে বসবাস। রাষ্ট্র একটা, ধর্ম-গোত্র অনেক। সংবিধানে সব মানুষের অধিকার সমানভাবে দেখার প্রতিশ্রুতি থাকে। সংবিধান সকলের জন্য, রাষ্ট্র সবার উপযোগী একটি দেশ। এখানে ধর্মের কারণে কাউকে ছোট বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যে যার ধর্ম অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে পালন করবে। সে জায়গায় কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। ধর্ম নিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অধিকারও কাউকে দেয় নি। যার যার ধর্ম সে পালন করুক আর নাই করুক সে তার ব্যক্তিগত বিষয়।
যেহেতু বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র, সেখানে যার যার ধর্ম তার খুশিমতো স্বাধীনভাবে সে পালন করবে। রাষ্ট্র জনগণকে সে অধিকার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সতর্ক থাকতে হবে কেউ কারো ধর্মের প্রতি কোনো অবস্থায় কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিদ্বেষ ছড়াতে পারবে না। সে ধর্ম ছোট হোক আর বড় হোক, তার অনুসারী সংখ্যায় বেশি আর কম সে তারতম্যে তার বিচার হবে না। কোনো ধর্মের প্রতি বিশ্রী মন্তব্য সেটা কোনো সমাজ মেনে নিতে পারে না। যে বা যারা ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ আচরণ করবে তাদের অবশ্যই কটোর শাস্তি হওয়া চায়।
বাংলাদেশে গত ১৮ অক্টোবর ভোলার বোরহান উদ্দীন এলাকায় একজন হিন্দু যুবক তার আইডি থেকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। ফলে সে এলাকার মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় মুসল্লিরা ওই যুবকের বিচারের দাবিতে সভা সমাবেশ করার ডাক দেয়। ১৯ ও ২০ অক্টোবর সে এলাকায় বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন সম্মিলিতভাবে সমাবেশের ডাক দেয়। স্থানীয় প্রশাসন তাদেরকে নিবৃত্ত করতে পারে নি। যতদূর জানা যায়, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। সমাবেশ থেকে পুলিশের উপর আক্রমণ শুরু হলে পুলিশ আত্মরক্ষায় মুসল্লীদের ওপর গুলি চালালে সেখানে ৪জন মুসল্লী ইন্তেকাল করে। লেখাটা লেখা পর্যন্ত সে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে বলে জানা যায়।
বিপুল পরিমাণে সেখানে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বোরহান উদ্দীনের এ ঘটনা সারাদেশে মুসলমানদের মধ্যে চরমভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তার রেশ ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারি, ফটিকছড়ি তথা উত্তর চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাটে জনদুর্ভোগও বেড়ে গেছে। যানচলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে দূর যাত্রার অনেক মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র মতে, জানা যাচ্ছে যে যুবক তার আইডির মাধ্যমে মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে কটুক্তির সংবাদ ছড়িয়েছে, বাস্তবে অন্য একজন লোক তার আইডিকে হ্যাক করে তার নামে এ অপবাদ ছড়িয়ে দেয় বলে ওই যুবক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট স্বীকার করেছে। তাহলে ঘটনাটা সাজানো একটি নাটক বলা যায়। যে বা যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে এ অপরাধের সাথে জড়িত অবশ্যই তাদের কঠোর বিচার হওয়া চায়। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ফায়দা লুটার জন্য যারা উৎপেতে আছে, রাষ্ট্রকে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
ধর্ম নিয়ে অপ রাজনীতি অপ তৎপরতা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। তথ্য প্রযুক্তি এটাতে কল্যাণ অকল্যাণ দুটোই আছে। তথ্য যাচাই বাছাই না করে একটা বিষয় দেখলেই তাকে নিয়ে হইচই করে সমাজকে অস্থির করা কোনো অবস্থায় ধর্মীয় আদর্শের মধ্যে পড়ে না। ভালো মন্দ যে বিষয় হোক না কেন তা গভীরভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব ধর্মীয় নেতাদের থাকতে হবে। বিচার বিশ্লেষণ না করে হুজুগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কোনো অবস্থায় সমাজে স্থিতিশীল পরিবেশ ধরে রাখা সম্ভব নয়। যাদের অদূরদর্শীতায় এসব ঘটনা ঘটছে এবং মূল্যবান জীবন নষ্ট হচ্ছে অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আর অরাজকতা তৈরি করতে দেয়া যায় না।
ধর্ম পবিত্র শব্দ, ধর্ম যথাযথভাবে অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে শান্তি আর শৃঙ্খলা। ধর্মীয় মূল্যবোধ ঐক্য শান্তি কঠোরভাবে ধরে রাখতে হবে। যার যার ধর্মীয় আচার অনুষ্টান সে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। রাষ্ট্রকে সেটায় নিশ্চিত করতে হবে। অপর ধর্মের বিরোদ্ধে কোনো অবস্থায় বিরূপ মন্তব্য কঠোর আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশকে তার আপন ধর্মীয় সম্প্রীতির মধ্যে ধরে রাখতে হবে। কোনো গোত্র কোনো ষড়যন্ত্রের দেশি বিদেশি জালে আমরা জড়িয়ে পড়তে চাই না। এ বিষয়ে এদেশের সকল ধর্ম গোত্রের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। তাহলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আরো সমৃদ্ধ হবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
লেখক: মাহমুদুল হক আনসারী
গবেষক, প্রাবন্ধিক ..