বন্দর ম্যাজিস্ট্রেটের ভুয়া পরিচয়ে ভরা- হোটেলে তালা ঝুলিয়ে দিল সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে ‘ক্যাফে ডি মমতাজ’ নামের একটি হোটেলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে একদল সন্ত্রাসী
৭১ বাংলাদেশ প্রতিবেদকঃচট্টগ্রাম বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে রাতের অন্ধকারে ‘ক্যাফে ডি মমতাজ’ নামের একটি হোটেলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। অথচ বন্দর ম্যাজিস্ট্রেট এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কারা তার নাম ভাঙিয়ে এ কাজ করেছে—সে সম্পর্কেও তিনি কোনো ধারণা করতে পারেননি। বন্দরের ভূমি কর্মকর্তাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
জানা যায়, গত রোববার (২৩ জুন) রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রামের বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গা এলাকার ‘ক্যাফে ডি মমতাজ’ খাবারের হোটেলটিতে হঠাৎ করেই একদল ঢোকে। ঢুকেই তারা দোকানের কর্মচারী ও খাবার খেতে আসা লোকজনকে বের করে দেয়। এরপর দোকানের শাটার টেনে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন রাতেই হোটেলের সামনে ইট ও বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণ সরঞ্জাম এনে রাখে একদল লোক।
এদিকে ঘটনার পরদিন সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে হোটেল মালিক জামাল আহমদের পক্ষে তার ভাই জাফর আহমদ বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় অভিযোগ জমা দেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ওই জায়গায় (ক্যাফে ডি মমতাজ) উভয়পক্ষের মধ্যে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন আদালত —জানিয়েছেন বাদিপক্ষের আইনজীবী।
চট্টগ্রাম আদালতে দায়ের করা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, হোটেল মালিক জামাল আহমেদের পক্ষে তার ভাই জাফর আহমেদ বাদি হয়ে ১৪৫ ধারায় আবেদন করেন আদালতে। পরে ওই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। এতে বশির আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা এলাকার ৬৫৫/এ ,কে বি দোভাষ লেইনের মৃত আলী মিয়ার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গোসাইলডাঙ্গায় ০.০৯ একরের খালি জায়গাটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লিজ নেন মো. বশির আহমেদ (বশির এন্ড কোম্পানী লিমিটেড)। ২০০৪ সালের ১ মার্চ প্রথম মেয়াদে লিজদাতা বশির আহমদের কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য জায়গাটি হোটেলের জন্য ভাড়া নেন ব্যবসায়ী জামাল আহমদ। ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুনরায় আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে চুক্তি নবায়ন করে উভয়পক্ষ। চুক্তি মোতাবেক প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত হোটেল মালিক ও লিজদাতার সঙ্গে আইনগত কোনো সমস্যা হয়নি উভয়পক্ষের মধ্যে।
তবে লিজদাতা বশির আহমদ ২০১৭ সালে ‘বশির এন্ড কোম্পানী লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অভিযোগে জানা যায়, এরপর থেকে কোম্পানিটির পরিচালকরা হোটেল মালিককে তাড়িয়ে সেখানে একটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করতে উঠেপড়ে লাগেন। এর প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন হোটেল মালিক জামাল আহমেদ। তবে লিজদাতার কোনো আপত্তি ও প্রকাশ্য উচ্ছেদের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় গত ২৩ জুন রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
জানতে চাইলে হোটেল মালিক জামাল আহমেদ বলেন, ‘২০২৪ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ। কিন্তু হঠাৎ করে তারা চুক্তি করার শেষ হওয়ার আগেই জোর করে বিনা নোটিশে আমার দোকান তালা মেরে দেয়। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আমি আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
‘বশির এন্ড কোম্পানী লিমিটেডের’ সিইও সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান শাহনাজ আলমের স্বামী রাশেদুল আলম মামুন। সম্পর্কে তিনি অভিযুক্ত বশির আহমদের নাতনি জামাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইম ডিস্ট্রিবিউশনের স্বত্ত্বাধিকারী রাশেদুল আলম মামুন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ওই জায়গা উচ্ছেদের সময় ম্যাজিস্ট্রেট ছিল।
কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাড়ই বলেছেন, ‘গত রোববার বন্দরের গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় জায়গা উদ্ধারের কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।’
অন্যদিকে হোটেল মমতাজে তালা লাগানোর বিষয়টি অস্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি এস্টেট ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তালা কে বা কারা লাগিয়েছে, আমি জানি না। আমি সেখানে ছিলাম না।’ তিনি বলেন, ‘বন্দরের জায়গা হাইকোর্টের রায়ে বন্দর পেয়েছে। এটা নিয়ে এতো মাতামাতির দরকার কী?’
সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে হোটেল মালিক জামাল আহমেদ বলেন,২৩ শে জুন হাইকোর্টে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তৎ আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগে চেম্বার জর্জ আদালতে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে খারিজ হয়ে যাওয়া আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেন।
রাশেদুল আলম মামুন বন্দর ম্যাজিস্ট্রেট এর উপর মিথ্যা দায় চাপিয়ে উচ্ছেদের কথা বললেও যা, সর্বৈব মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়। আদালতের নির্দেশনা ও আরো পাঁচ বছর চুক্তির মেয়াদ থাকলেও হোটেল মালিককে জোড়পূর্বক সন্ত্রাসী কায়দায় উঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার পেছনে কে বা কারা? তার এত ক্ষমতার উৎসইবা কি? কলকাঠি নাড়ছে কে ?