বিশেষ প্রতিবেদকঃঅনুমোদন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে করোনার নমুনা সংগ্রহের পর টেস্ট না করেই ভুয়া রেজাল্ট দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনায় জেকেজি’র চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে রেজিস্ট্রার চিকিৎসক ডাঃসাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে পুলিশের তেজগাঁও ডিসি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার দুপুরে তাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়।
সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।করোনার রিপোর্ট কেলেঙ্কারিতে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ডা. সাবরিনার চতুর্থ স্বামী জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জন। তাদের এক ল্যাপটপেই পাওয়া গেছে ১৫ হাজারেরও বেশি করোনার ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট।
ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, করোনা টেস্ট নিয়ে জেকেজি হাসপাতালের জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ডা. সাবরিনাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। রোববার (১২ জুলাই) দুপুরে তাকে তেজগাঁও ডিসির কার্যালয়ে ডেকে নেয়া হয়।জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা জেকেজির সঙ্গে অনেক আগেই সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। তিনি জানান গত ৪ জুন জেকেজি সিইও এবং স্বামী আরিফুলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে সাবরিনা তেজগাঁও বিভাগের একটি থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন। এর অন্তত দুই মাস আগে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সাবরিনা জানান।
করোনা মহামারিতে ভাইরাস শনাক্ত নিয়ে এই স্পর্শকাতর প্রতারণায় শুরু থেকেই জড়িত প্রতিষ্ঠানটিতে সম্পৃক্ত ছিলেন ডা. সাবরিনা। তার আবেদনেই জেকেজি হেলথকেয়ার করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনের কাজ পায়। তিনি নিজে জেকেজির কর্মীদের তিতুমীর কলেজে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অথচ তারই প্রতিষ্ঠান করোনা টেস্টের নামে দিনের পর দিন মানুষকে ঠকিয়ে আসছিল তার প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেজিস্ট্রার চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও তিনি ছিলেন জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। এই পরিচয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং কথা বলতেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। এটি সরকারি চাকরি বিধিমালার সুষ্পষ্ট লংঘন। কিভাবে, কার মাধ্যমে তিনি এ কাজ হাতিয়েছেন, সে ব্যাপারে চলছে অনুসন্ধান। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হবে। প্রতারণার দায়ে স্বামী আরিফ চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার পর জেকেজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার দাবি করেছেন, তিনি এক মাস আগেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। আবার বলছেন যে তিনি কখনওই চেয়ারম্যান ছিলেন না, সবাই নাকি মুখে মুখে ডাকতো।
জেকেজির এই প্রতারক চক্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সব প্রভাব প্রতিপত্তির উৎস ছিলেন ডা, সাবরিনা চৌধুরী বলে অভিযোগ আছে।
জেকেজির সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে অনুনোমদিতভাবে টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত। এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফকেও গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর ২৪ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল তা বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
করোনাকালের এই প্রতারণার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে তেজগাঁও থানায়। এসব মামলার কোনোটিতে এখন পর্যন্ত ডা. সাবরিনার নাম যুক্ত করা হয়নি। কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এবং কাদের কারসাজিতে তিনি এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ডা. সাবরিনার অপকর্মে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ ও সোশাল মিডিয়া তুমুল আলোচনার মুখে জিজ্ঞাসবাদের জন্য তাকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জেকেজির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে ডা. সাবরিনার সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পাওয়াতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।