ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের হয়ে প্রথম মৌসুমেই ৫২ ম্যাচে ৪৪ গোল করেছেন মিশরের স্ট্রাইকার মোহাম্মদ সালাহ। তাঁর পারফরম্যান্সের জোরেই ২০০৭-এর পর ফের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল। যদিও স্বপ্ন পূরণ হয়নি। র্যামোসের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে কাঁধে গুরুতর চোট পেয়ে প্রথমার্ধেই কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয় সালাহকে। চোটের কারণে বিশ্বকাপে মিশরের হয়ে সালাহর খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তিনি দলের সঙ্গে রাশিয়া পৌঁছে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাঁর অনুরাগীরা। বিশ্বকাপে খেলতে পারায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সালাহ। নিচে তাঁর সাক্ষাৎকারটি পড়ুন।
প্রশ্ন: রাশিয়ায় জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে আপনি কতটা উত্তেজিত?
সালাহ: সত্যি বলতে কী, বিশ্বকাপে খেলার জন্য আমি রীতিমতো ছটফট করছি। প্রত্যেক ফুটবলারেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। ১৯৯০ সালের পর ফের আমাদের দেশ বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছে। মিশরকে মূলপর্বে তুলতে পারায় আমরা সকলেই দারুণ খুশি।
প্রশ্ন: মিশর এই নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছে। এর আগে মিশর যে দু’বার মূলপর্বে খেলেছে, সেই দু’বারই ((১৯৩৪ এবং ১৯৯০) বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ইতালি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এবার রাশিয়ায় ইতালিই নেই!
সালাহ: হ্যাঁ, ইতালির সমর্থকদের কাছে সত্যি এটা খুবই দুঃখের বিষয়। ইতালি হল বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শক্তি। চিলি এবং হল্যান্ডের সমর্থকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে, আমাদের সমর্থকরা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন বিশ্বকাপের আসর মাতিয়ে দিতে। বুঝতেই পারছেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর আমরা আবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছি বলে এখন থেকেই সমর্থকরা আনন্দে গা ভসিয়েছেন।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পর গুরুতর চোট পেয়ে আপনাকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। এরপরই জল্পনা শুরু হয়েছিল যে আপনি বিশ্বকাপে নাও খেলতে পারেন।
সালাহ: হ্যাঁ, ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আশার বিষয় হল, বিশ্বকাপে খেলার জন্য আমি রাশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছি। মূলপর্বে ওঠার পর আমি খেলতে না পারলে সেটা অত্যন্ত হতাশার বিষয় হত। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, উনি আমাকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ দিয়েছেন। আমার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দিয়েছেন।
প্রশ্ন: আয়োজক রাশিয়া, সৌদি আরব এবং উরুগুয়ের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে মিশর। পরের রাউন্ডে যাওয়ার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সালাহ: নক-আউট পর্বে কোয়ালিফাই করার কথা বেশি না ভেবে আমাদের উচিত নিজেদের সেরাটা মেলে ধরার দিকে নজর দেওয়া। আমাদের প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। এখন গ্রুপের তিনটি ম্যাচে পরিকল্পনামাফিক সব কিছু উজাড় করে দিতে হবে। আর সেটাই যদি হয়, তাহলে ফল আপনা থেকেই আসবে। তবে, বিশ্বকাপে খেলাটা আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: আপনাদের প্রথম ম্যাচই উরুগুয়ের বিরুদ্ধে। যারা টুর্নামেন্টে বহু দূর পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
সালাহ: উরুগুয়ে দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ওরা সেমি ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ওদের দলে লুই সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানির মতো প্লেয়ার রয়েছে। উরুগুয়ের খেলা দেখে যতটুকু বুঝেছি, ওদের কোনওমতে খালি জায়গা ছেড়ে দেওয়া চলবে না। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা যদি গোল করে দিতে পারি, তাহলে ওদের পক্ষে কিন্তু আমাদের রক্ষণ ভেঙে গোল শোধ করা সহজ হবে না।
প্রশ্ন: চূড়ান্ত কোয়ালিফাইং গ্রুপে আপনাদের প্রতিপক্ষ ছিল ঘানা। বিশ্বকাপে খেলার প্রশ্নে ওরা কিন্তু ফেবারিট ছিল!
সালাহ: ঘরের মাঠে ওদের হারানোর জন্য আমরা দারুণ লড়েছিলাম। আর অ্যাওয়ে ম্যাচে ড্র করেছিলাম। সেই কারণেই গ্রুপ শীর্ষে থেকে রাশিয়ায় খেলায় ছাড়পত্র আদায় করতে পেরেছিলাম। আমাদের গ্রুপে ছিল উগান্ডা এবং কঙ্গো। আমরা একমাত্র উগান্ডার কাছেই হেরেছিলাম।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে যে সব ফুটবল তারকার দিকে নজর রয়েছে, সেই তালিকায় লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার এবং আন্দ্রে ইনিয়েস্তার সঙ্গে রয়েছে আপনার নামও।
সালাহ: এই সব ফুটবলারই কিংবদন্তি। আন্তর্জাতিক সাফল্য এবং তারকা হওয়ার বিচারে আমি এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। ঈশ্বরের কৃপায়, ইউরোপের পেশাদারি ফুটবল দুনিয়ায় আমার অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছর ধরে আমি মাঠে নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। কিন্তু, এই তারকারা নিজেদের সর্বকালের সেরার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। মেসি, রোনালদো, নেইমাররা বিশ্বকাপ জেতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। আর ইনিয়েস্তা চাইবে ২০১০ সালের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর। এই তারকাদের সঙ্গে আমাকে একই তালিকায় রাখবেন না প্লিজ!