এস এম মনিরুজ্জামান,বাগেরহাট:খুলনায় শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন ও বীর বিক্রম মহিবুল্লাহ’র ৪৭তম শাহাদৎ বার্ষিকী ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত করতে তিনটি রণতরিসহ খুলনা অভিমুখে যাত্রাকালে শিপইয়ার্ডের অদুরে মিত্রবাহিনীর বোমা হামলায় স্বাধীন বাংলার এ দুই সূর্য সন্তান শহীদ হন। পরে তাদের রূপসা নদীর পূর্ব পাড়ে সমাহিত করা হয়। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে প্রতিবারের মত এবারও বাংলাদেশ নৌবাহিনী, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা প্রশাসন ও
রূপসা প্রেসক্লাব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকালে মাজার প্রাঙ্গনে
শহীদদ্বয়ের প্রতি সশস্ত্র শ্রদ্ধা নিবেদনসহ
পুস্পস্তবক অর্পন, বিকেলে রূপসা প্রেসক্লাব
মিলনায়তনে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও সন্ধ্যা ৭টায় প্রেসক্লাব ক্রীড়া চত্বরে ১৬ দলীয়
ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট। প্রসঙ্গত, চুড়ান্ত বিজয়ের অভিযানের উম্মাদনায় খুলনাকে শত্রুমুক্ত করতে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি তিতুমীর
দখল করতে ৭ ডিসেম্বর মুক্তিকামী নৌসেনারা
নেভাল জেটি হলদিয়া থেকে তিনটি রণতরী
বি,এন,এস ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ ও আই,এন,এস
‘পানভেল’ (ভারতীয়) নিয়ে বাংলার জলসীমায় যাত্রা শুরু করেন। মংলা বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত করে ১০ ডিসেম্বর ভোরে খুলনা অভিমুখে রওনা হয় রণতরী তিনটির যোদ্ধারা। রণতরী বহরের প্রথমে ভারতীয় জাহাজ আই,এন,এস ‘পানভেল’, মাঝে
বি,এন,এস ‘পলাশ’ ও শেষে আই,এন,এস ‘পদ্মা’ একই গতিতে এগোতে থাকে। বেলা ১২টার দিকে জাহাজ তিনটি খুলনার শিপইয়ার্ডের অদুরে পৌঁছালে ভুল সিগনালের কারণে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ বিমানের নিক্ষিপ্ত বোমায় ‘পলাশ’ ও ‘পদ্মা’ জাহাজ মারাত্বক ভাবে বিধস্ত হয়। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়ে পদ্মা’র ইঞ্জিন বিকল হয়ে নদীর চরে আটকা পড়ে এবং পলাশ জাহাজে আগুন ধরে যায়। এ সময় জীবন
বাঁচাতে অনেকে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু
পলাশের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশিয়ার (চিফ ই.আর.এ) রুহুল আমিন অগ্নিদগ্ধ রণতরী পলাশ ও বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই শহীদ হন। পরে তিনি বীরশ্রষ্ঠ উপাধিতে
ভুষিত হন। সেই সাথে আরো শহীদ হন বীর
বিক্রম মহিবুল্লাহ, নৌ-সেনা ফরিদ উদ্দীন, আখতার উদ্দীন, দৌলত হোসেন ও নৌ-কমান্ডো মোঃ রফিকসহ ১০জন। এ সময় স্থানীয় জনতা যুদ্ধ বিধস্ত পলাশে থাকা বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন ও বীর বিক্রম মহিবুল্লাহসহ অন্যান্য শহীদদের লাশ রূপসা নদীর পূর্ব তীরে সমাহিত করেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ২৫ বছর পর ১৯৯৭ সালে এ দুই
বীরের কবর স্থানীয় এক শিল্পপতি বিলুপ্ত করে
শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নিলে তৎকালীন রূপসা রিপোর্টার্স ক্লাব (বর্তমান রূপসা প্রেসক্লাব) এটি রক্ষার জন্য শহীদদ্বয়ের স্মৃতিতে ক্রিকেট
টুর্ণামেন্টের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে
আসেন তৎকালীন খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি ড. নজরুল ইসলাম, কেডিএর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম (বীর প্রতীক) ও প্রয়াত সাংবাদিক বিবিসি খুলনা প্রতিনিধি মানিক চন্দ্র সাহাসহ সূধীজনেরা। এ সময় এ দুই বীরের কবরের ভগ্নদশা দেখে কেডিএ’র চেয়ারম্যান বিস্মিত হন এবং দু’টি মাজার
কমপ্লেক্সে রুপান্তরিত করার জন্য তাৎক্ষনিক ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। সেই সাথে ডিজাইনের দায়ীত্ব দেওয়া হয় খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। এর পর এখানে নির্মিত হয় এ দু’বীরের মাজার কমপ্লেক্স। কিন্তু গত বিএনপি আমলে পূর্বের ডিজাইন ভেঙ্গে নতুন আঙ্গিকে মাজার কমপ্লেক্স নির্মাণ করে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমীনের পিতার নাম
আজাহার আলী মিয়া। বাড়ি নোয়াখালী জেলার
বেগমগঞ্জের বাগচাঁপড়া গ্রামে। তিনি ১৯৫৩ সালে নৌ বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সালে ৯ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। শহীদ
বীর বিক্রম মহিবুল্লাহ’র পিতার নাম মোঃ সুজা আলী। বাড়ি চাঁদপুরের শাহেদপুর গ্রামে। তিনি ১৯৬২ সালে নৌবাহিনীতে যোগদান করেন এবং একই সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। তার জন্ম ১৯৪৪ সালের ৩১ আগষ্ট।