আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনো নির্বাচন কমিশন নেয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। শুধু আইনগত ক্ষেত্রটি তৈরি করার জন্য আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আরপিও সংশোধন আনতে এ বৈঠকে বসে ইসি।
বৈঠক শেষে সিইসি আরো বলেন, আজকের বৈঠকে আরপিও নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন এটি খসড়া আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের সম্মতি থাকলে এটি জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও ইভিএম ব্যবহারে জনগণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি ব্যবহার করা যায় কি না, তা পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
যেহেতু ৩৫টি দল ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসম্মতি জানিয়েছে, সেক্ষেত্রে ইসি কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে তেমন পরিস্থিতি থাকলে বা প্রয়োজন হলে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা হবে।
সিইসি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তিনি বলেন, ‘আমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে কিছু সংশোধনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়ে জাতীয় নির্বাচনে এই বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদে পাঠানোসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আইনটি সংশোধন হবে।’
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘কমিশন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন কমিশনার আপত্তি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। তবে অন্য চারজন কমিশনার এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ তৈরির জন্য এই সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, এ বিষয়ে কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখন জাস্ট আমরা এই আইন পাস করে একটা ক্ষেত্র তৈরি করে রাখব। ইভিএম নিয়ে আইনে সংশোধনী আনা হবে। এটা নিয়ে আমরা একটা মেলা করব। সবার মতামত নেব। সেখানে পরিবেশ পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে তখন সিদ্ধান্ত হবে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যমে আমরা প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন আগে পাস হোক। সবার মতামত নেই। তখন যদি সম্ভব হয় একাদশে (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে দেখা যাবে।’
ইভিএম কেনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইভিএম কেনার বিষয়ে এখনো কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের নিজস্ব কিছু ইভিএম রয়েছে। আমরা সেগুলো দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চালাচ্ছি। তবে কিছু ইভিএম কেনা হয়েছে প্রশিক্ষণের জন্য। এগুলো অবশ্য প্রকল্পের আওতায় নয়।
রাজধানীর আগারগাঁরওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে সিইসির সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় এ বৈঠক শুরু হয়। এক ঘণ্টা মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৈঠক চলে।
এদিকে, ইভিএমের বিধান যুক্ত করে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বৈঠক বয়কট করেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।