মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানোর দাবির সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আন্দোলনকারীদের তিনি রাজাকার বলেননি, এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন ওবায়দুল কাদের।
বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ কমিটির বৈঠক শেষে এ কথা জানান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
গত সোমবার কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। আর এই বৈঠকে এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার পর ছাত্ররা ৭ মের মধ্যে আন্দোলন স্থগিত করে। কিন্তু ওই রাতে সংসদে মতিয়া চৌধুরীর একটি বক্তব্যে ছাত্ররা আবার ক্ষুব্ধ হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানোর সমালোচনা করে মতিয়া সংসদে বলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী, যারা লড়াই করে, জীবন দেয়, জীবনকে বাজি রাখে তাদের জন্য সুযোগ রাখে। এটা নতুন কিছু না। যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের ছেলে মেয়ে কিংবা বংশধরদের আরেকটি সিঁড়ি সুযোগ পাবে না? ওই রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কোটা সংকুচিত করতে হবে?’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটি এলিট শ্রেণি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের মফস্বলের কলিমুদ্দিন, সলিমুদ্দিনের ছেলে মেয়েরা উপরে উঠতে না পারে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলার কথা উল্লেখ করে মতিয়া আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে এবং এই রাজাকারের বাচ্চাদের অবশ্যই আমরা দেখে নেব।’
‘ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোন রাগ নেই। কিন্তু যারা স্ট্যাটাস (এক ছাত্রের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে) দিয়েছে, তাঁরা তো অছাত্র, মতলববাজ, জামায়াত-শিবির স্বাধীনতা বিরোধীদের এজেন্ট। এদের সম্বন্ধে সামান্যতম শৈথল্য আমরা দেখতে চাই না, দেশবাসীও চান না।’
আন্দোলনকারী ছাত্ররা ভেবেছেন, মতিয়া তাদেরকে রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। আর মুক্তিযুদ্ধের সেনানী মতিয়াকেই ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে তার চামড়া তুলে নেয়ার কথা বলে স্লোগান দেয় তারা।
মতিয়ার মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্নে কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে মতিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের তিনি রাজাকার বলেননি।
‘মতিয়া চৌধুরী আমাকে বলেছেন তিনি ঢালাওভাবে কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, যারা ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করেছে তাদের বলেছেন। ঢালাওভাবে বলেননি।’
বক্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান
পরিস্থিতির বিবেচনায় বক্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্যও দলের নেতাদেরকে আহ্বান জানান কাদের। বলেন, ‘এখন স্পর্শকাতর সময় অতিক্রম করছে সরকার। এই সময়ে দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্বশীল কথা বলা উচিত। দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বললে তা উস্কানিমূলক হয়। তাই দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলবেন না।’
‘কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হবেন না’
কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চক্রান্ত চলছে বলে সতর্ক করেন কাদের। বলেন, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করা যাবে না।’
‘আমি আন্দোলনকারীদের আবারো বলব, গুজবে কান না দিতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকরা গত নয় বছর কোন সুযোগ পায়নি। কিন্তু এখন তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।’
‘আমি আপনাদের বলবো কারো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবেন না। অশুভ রাজনীতির ছায়া যেন বিস্তার না করতে পারে। যদি আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব তাদের হাতে চলে যায় তাহলে দেশে ক্ষতি হবে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
‘কোটা সংস্কারের আন্দোলন যারা করছেন তারা যেন এ আন্দোলনেই থাকে। কারও খেলাও শিকার না হয়।’
কাদের বলেন, ‘আমরা এর মধ্যে খবর পেয়েছি, কীভাবে এ আন্দোলনকে কারও মুক্তির আন্দোলনে পরিণত করা যায়, তার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার দলের নেতৃবৃন্দকে বলব দায়িত্বশীল আচরণ করতে। আর যারা আন্দোলন করছেন তারাও যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে বিশ্বাস রাখে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।