দশ দিন অতিবাহিত হতে চললেও সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত মানষিক প্রতিবন্ধি মনেক্কা (মমতাজ) বেগম (৭৫)’র পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলায় পুরম্নষ ওয়ার্ডের ১২নং বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাঙ্গা পা’য়ের যন্ত্রনা নিয়ে কাতরাচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই রাত সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ব্রাহ্মনবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মীরপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্নে একটি দ্রতগামী মোটর সাইকেলের ধাক্কায় ওই মহিলার পা’ ভেঙ্গে যায়।
ঐ খান থেকে একজন পুলিশ সদস্যের অনুরোধে একজন সিএনজি চালক তাকে উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে। প্রথম দিকে হাসপাতাল বেডে প্রশ্রাব- পায়খানার দূর্ঘন্ধ নিয়ে এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঔষধ আর খাদ্য সরবরাহে চলছিল তার দিনযাপন। পাশের বেডের রোগীদের অভিযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মঞ্জুর হোসেনের সহযোগীতায় তাকে পরিচ্ছন্ন করে ক্যাথেটর লাগিয়ে নিজ দায়িত্বে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার উন্নত চিকিৎসা এবং নার্সিং প্রয়োজন।
বেওয়ারিশ রোগী হওয়ায় তাকে দেখভালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গতানুগতিক নার্সিং সেবার বাহিরে বিশেষ কোন সুযোগ নেই। শুক্রবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গিয়ে দেখা যায় মনেক্কা বেগম মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে পড়ে কাতরাচ্ছেন। তার পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে, সমস্ত শরীর জুড়ে বিখাউজ চুলকাচ্ছে। তার পরিচয় জানতে চাইলে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন প্রশ্ন করলে চুপ থাকেন, এক পর্যায়ে তার নাম মনেক্কা বেগম, পিতা আমজাদ খান, ঢাকা মীরপুরের ১২ নম্বর এলাকায় বাসা। স্বামী-সন্তান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাই, তার বিয়ে হয়নি। তার ৬ বোন রেখা, শান্তা, করুনা, অরুনা, নিলু, মনেক্কা এবং ২ ভাই পনির, মামুন রয়েছেন। ২ ভাই উকিল, কোর্টে চাকরি করেন।
তিনি কিভাবে এখানে আসলেন সে সম্পর্কে বলেন ঢাকা থেকে হাটতে হাটতে এখানকার গোমতী নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছি।তার চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব নিলেন ‘দেবীদ্বার দরিদ্র রোগী কল্যাণ সমিতি’। বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘দেবীদ্বার দরিদ্র রোগী কল্যাণ সমিতি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য এবিএম আতিকুর রহমান জানান, ওই বে-ওয়ারিশ রোগীর চিকিৎসা সহায়তায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাহিরে যাবতীয় চিকিৎসা খরচ ‘দরিদ্র রোগী কল্যাণ সমিতি’র পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে। এ ব্যপারে ‘দেবীদ্বার দরিদ্র রোগী কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির এবং সদস্য সচিব উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যপারে সিএনজি চালক মোঃ শাহ আলম জানান, কসবা থেকে আসার পথে হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির সামনে ব্রাক্ষনবাড়িয়া থেকে কুমিল্লাগামী একটি মোটর সাইকেল এক বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে মোটর সাইকেল আরোহী নিজেও মারাত্মক আহত হন।
এসময় একজন পুলিশ আমার সিএনজি আটকে ওই মহিলাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য তুলে দেন। সাথে মোটর সাইকেল চালক কে বলেদেন মহিলার চিকিৎসা বাবত খরছ এবং আমার সিএনজি ভাড়া দিয়ে দিতে। আহত মোটর সাইকেল চালক দেবীদ্বার হাসপাতালে আসার কথা বলে সে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ঘটনার প্রত্যদর্শি পুলিশ সদস্য নূরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়, আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে চাকরি করি। ঈদের আগের রাতে ঢাকা থেকে কোম্পানীগঞ্জ বাস ষ্টেশনে নেমে সিএনজি যোগে কসবা যাচ্ছিলাম। এসময় মীরপুর এলাকায় একটি দ্রুতগামী মোটর সাইকেল পাগল মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে নিজেও আহত হন। পরে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দেই। মোটর সাইকেল চালক নরসিংদী এলাকায় একটি এনজিওতে চাকরী করেন। কুমিল্লা যাওয়ার পথে ওই দূর্ঘটনা ঘটে। মহিলাকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া এবং সিএনজি চালকের ভাড়া দিতে বলেছিলাম, সে রাজিও হয়েছে পড়ে শুনি সে পালিয়ে গেছে।
রোগীর সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মঞ্জুর হোসেন ও সিনিয়র নার্স জিন্নাত-আরা বেগম জানান, মনেক্কা (মমতাজ)বেগম ঈদের আগের দিন রাতে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বারান্দায় পড়েছিলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তায় ওখান থেকে এনে তাকে ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, উনার বাঁ পা ভাঙ্গা, পেটে ব্যথা ও উনার শরীরে স্কিন ইনফেকশন রয়েছে। আজ ১০ দিন পার হয়ে গেলেও উনার পরিবারের কেউ আসেননি। উন্নত চিকিৎসার জন্য উনাকে কুমিল্লা রেফারকরা হয়েছে, কিন্তু ওনার পরিবারের কেউ না থাকায় মানবিক কারনে এখানে রেখেই তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।