৭১ বাংলাদেশ নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁ’র রাণীনগড় উপজেলার ভবানীপুর মোবারক পাড়া গ্রামে সাদেকুল ইসলাম (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে তিন বছর ধরে কখনো শিখল বন্দি আবার কখনো গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। পাগলামি করে মানুষের ক্ষতি করছে এমন অজুহাতে তাকে গৃহ বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ভাই শেরেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সাদেকুল ওই গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম খোকার ছেলে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশেই ছোট্র একটি ইটের ঘরের মধ্যে ঠিক বনমানুষের মতো খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে সাদেকুল। সাদেকুল কথা বলতেই জানালেন স্কুল জীবনে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পার্শ্ববতি ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করেছেন। তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে কেন ? জানতে চাইলে নরম সুরে বললেন, বাড়ীতে ঠিকমত ভাত খেতে দেয়না, তাই অন্য মানুষের বাড়ীতে ভাত চেয়ে খাই, মাঝে মধ্যে বউয়ের খোঁজ করি, মানুষের সাথে একটু দুষ্টমি করি তাই বন্দি করে রেখেছে। জমি কতটুকু আছে এমন প্রশ্নের জবাব দিলেন মাত্র দেড় বিঘা। ছোট্র ইটের চার দেয়ালের মধ্যে একটি চৌকি,ওই ঘরের মধ্যেই রয়েছে তারা প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারার সৌচাগার এবং সিমেন্টের চারীর মধ্যে কিছু পানি। যা দিয়ে সেখানেই গোসল করতে হয়। সামনে গ্রিলের দরজা। দরজার মাঝ বরাবর গ্রিল কাঁটা রয়েছে,ওই কাঁটা অংশের মধ্য দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। তার সাথে কথা বলার সময় প্রতিবেশির বেশ কয়েকজন ছুটে আসলেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলো কত দিন থেকে তাকে বন্ধি করে রাখা হয়েছে ? তারাও বললেন প্রায় তিন বছর ধরে এ অবস্থায় রাখা হয়েছে। প্রতিবেশি বাপ্পি,আছিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জানালেন, তার কথা বার্তায় কিছুটা এলোমেলো রয়েছে। তবে তার আচরণে মানুষের কোন ক্ষতি হয়না। তবে ক্ষুধা লাগলে লোকজনের নিকট থেকে ভাত চেয়ে খায়। দীর্ঘ তিন বছর ধরে বন্দি অবস্থায় থাকার কারণে কিছুটা পাগলের আচরণ দেখা যাচ্ছে। তবে চিকিৎসা করলে ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু স্বার্থপর ভাই তাকে চিকিৎসা না করে পাগল সাজিয়ে বন্দি করে রেখেছে। সাদেকুলের ভাই শেরেকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন,প্রায় পনের বছর ধরে সাদেকুল পাগল হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা করে কোন ফল হয়নি। মানষিক হাসপাতালে ভর্তি করালে ডাক্তাররা তাকে পাগল বলতে পারেনা। সম্প্রতি রাজশাহী চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সাদেকুলের কথা এবং আচরনে ডাক্তাররা তাকে মানষিক রোগী বা পাগল বলতে নারাজ। তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। এক ছেলে জন্ম নেবার একবছর পর প্রায় একযুগ আগে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। মাথায় পাগলামো জাগলে লোকজনকে মারপিট করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ফেলে। তাই তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্র্যাক রাণীনগর শাখার মানবধিকার ও আইন সহায়তা কর্মর্সচীর এইচ আর এল এস কর্মকর্তা শাহানা সুলতানা জানান,কয়েক দিন আগে তিনি ওই গ্রামে একটি ট্রেনিংয়ের কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে সাদেকুলের গৃহবন্দির ঘটনাটি নজরে আসে। তিনি বলেন, ওই গ্রামের অন্তত ৩০ জন লোকের সাথে কথা বলে জেনেছেন, কয়েক বছর আগে সাদেকুল তার মায়ের মাথায় বাড়ি দিয়েছিল। সেই ক্ষোভে এবং সম্পত্তি ভোগদখল করতেই বড় ভাই শেরেকুল তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। সাদেকুলের দ্বাড়া কেউ ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে এমনটি গ্রামের কেউ বলতে পারেনি। দীর্ঘ দিন তাকে গৃহবন্দি করে রাখার কারণে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। তাকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হলে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন,এবিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।