জনতার কলামঃএকজন পেপার বিক্রেতা,প্রচণ্ড গরম আবার প্রচণ্ড শীতে, কোনোদিন ঝড়তুফানে কাক ভেজা হয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন পথে-প্রান্তরে মসজিদ -মক্তব থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ মাদরাসা সহ সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে,দোকানপাট, হাটবাজারে, প্রতিটি ঘরের দুয়ারে মানুষের দ্বারপ্রান্তে পত্রিকা পৌঁছিয়ে দেয়া যার পেশা।
তিনিই চট্টগ্রাম জেলা রাউজান থানার পশ্চিম ডাবুয়া নিবাসী রাম কৃষ্ণ দে। ১৯৯২ সাল থেকে একটি সাইলের ওপর ভর করে দু’পায়ে প্রায় ১৪-১৫ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীরের গাম জড়িয়ে পত্রিকা পড়ুয়াদের ক্ষিদে মিটিয়ে আসছে। সেদিন তার সাথে রাউজান গহিরা জে.কে মেমোরিয়াল হসপিটালে দেখা হলে ৬ টাকা মূল্যের ১ টি পত্রিকা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ একান্ত আলাপ করি।
তিনি জানান, প্রায় ২৮ বছর যাবৎ পেপার বিক্রি পেশায় জড়িত আছেন। পেপার কোথা থেকে সংগ্রহ করে সেকথা জানতে চাইলে জানান;রাউজান মুন্সী ঘাটা পার্টি অফিসের সামনে থেকে সকাল ৭টায় পেপার সংগ্রহ করেন এবং তা সাইকেল যোগে রাউজান-গহিরা এবং অদুদিয়া সড়ক হয়ে ফটিকছড়ি থানার জাহান পুর পর্যন্ত গিয়ে ২টা নাগাদ শেষ করেন।
এই কাজে তিনি একা কি-না তা জানতে চাইলে উত্তরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে যেমন,অজুত শীল,সাধন শীল,রতন দে,দুলাল শীল সহ ১৩-১৪ জন আছেন বলে জানান।আরও জানান পত্রিকাগুলি শহর থেকে রাউজান আনতে বহনকারীকে ৫০ টাকা করে তাদের দিতে হয়।
এই পেশায় লাভ-ক্ষতি প্রশ্নে তিনি বলেন,লস্ নেই। প্রত্যেক পেপারে ২টা করে থাকে,বিক্রি না হওয়া পত্রিকাগুলি নিজ নিজ অফিসে ফেরত নেয় বলে জানান। মূলত কাগজের এসব পত্রিকা সবার নিকট পৌঁছানো যেমন দায়িত্বে পড়ে তেমন টার্গেট পূরণ করে ক্ষুদ্র যে একটা আয়ে তার ঘরসংসার চলে সেই নিদারুণ কষ্টের ছায়া মানুষটির চোখেমুখে বেশ ফুটে ওঠে।
চিন্তিত মনোভাবে মানুষটি সাইকেল নিয়ে ছুটছে রোদ-বৃষ্টি আর ঠান্ডা মাঝে!পত্রিকার কাগজ যাতে ভিজে নষ্ট না হয় সেক্ষেত্রে দেখা যায় যত্নে একখানা প্যালাস্টিক মোড়ায়ে রাখে।সেও যাতে সুরক্ষা পায় তার জন্য নিজের মাথায় পলিথিন প্যাঁছিয়ে মাথা ঢেকে রাখতেও দেখা যায়।
আমরা আমাদের হাতে পত্রিকা আসা মাত্রই দেশ ও জাতিকে জানতে পারি কিন্তু যিনি এসব জানান দিতে সাহায্য করে কখনো কি সে পত্রিকাওয়ালার কথা চিন্তা করি?কখনো কি প্রশ্ন করার সময় হয়েছে মানুষটি কেমন আছে কিংবা তার পরিবারের অবস্থা কেমন?সেদিন আমার প্রশ্ন করার সুযোগ হলে তার পরিবারের অবস্থা জানার চেষ্টা করি,পরিবারে তার মা-বাবা পরলোক গমন করেছে অনেক আগেই।
২০০১ সালে তিনি ‘রোজি দে’কে বিয়ে করেন এবং (৪)চার কন্যা সন্তানের জনক হন।মেয়ে বড়টা ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন সময়ে বিয়ে দেন আর মেঝ মেয়ে মেট্রিক দিয়েছে,সেঝ মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ছে আর ছোট মেয়েটি এখনো ছোট।শত দুঃখে’র মাঝেও মুখে মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘরসংসার আর পেশাগত জীবনে বেশ সুখে আছেন বলে জানান।
লেখক ও সাধারণ সম্পাদক আরব আমিরাত, কলম সাহিত্য সংসদ লন্ডন।