মোঃ হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জঃপনেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পরিসর। এতে রয়েছে কমপক্ষে ছয় লাখ লোকের বসবাস। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তা নদী বেষ্টিত। উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। উপজেলাটির উত্তরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যার দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। দক্ষিণে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল। যার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। ছয় লাখ লোকের জন্য রয়েছে মাত্র ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১৫ সালে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তারের চাহিদা আজও পূরণ করা হয়নি। যার কারণে প্রতিদিন হাজারও রোগি চিকিৎসা নিতে এতে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।এখনো চরাঞ্চলে সনাতন পদ্ধতির মাধ্যমে পানি পড়া, তাবিশ-কবজ ও ঝাড় ফুক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি থাকলেও ডাক্তার সংকটের কারণে অপারেশন থিয়াটার চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণেই মূলবান সম্পদ নষ্ট হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে জরুরী বিভাগ ও বহি বিভাগের উফছে পড়া রোগির ভিড়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সেবা প্রদানে চরম বেঘাত সৃষ্টি হয়েছে। কথা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনায় কর্মরত ডাক্তারের সাথে। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ২৪টি। সে স্থলে তিনিসহ মেডিকেল অফিসার রয়েছেন মাত্র ৬ জন। উপ-কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ১৭টি। সে স্থলে রয়েছে মাত্র ২ জন। ফার্মাসিষ্টের পদ রয়েছে ১৭টি। সে স্থলে রয়েছে মাত্র ১ জন। ২২ টি নার্সের পদের মধ্যে রয়েছে ১৬জন। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারি ও অন্যান্য পদ মিলে মোট ৭২টি পদ শূন্য রয়েছে। সার্জারি ডাক্তার না থাকায় অপারেশন থিয়াটার বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। একটি মাত্র এ্যাম্বলেন্স থাকলেও প্রতিনিয়ত সেটি গ্যারেজে নিতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় বেশির ভাগ রোগিকেই রেফার্ড করা হচ্ছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ডাক্তার রাকিবুল ইসলাম, বিশ্বেশ্ব্র চন্দ্র সরকার, আশরাফুজ্জামান সরকার, আবু হেনা আশরাফুল ইসলাম ও শরিফ-উল ইসলাম। ৫ জন মেডিকেল অফিসার পর্যাক্রমে দায়িত্ব পালন করে আসছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ফিরে দেখা গেছে ৫০ জনের অধিক রোগি রয়েছে। তবে ল্যাট্রিন সমূহ ব্যবহারের যোগ্য নয়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে পুরুষ ওয়ার্ডের একজন রোগি এ প্রতিনিধিকে জানান, বেশির ভাগ ওষুধ বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। ডাক্তারগণ ওষুধ লেখে দিলেও নার্সরা বলেন, স্টোরে ওষুধ নেই। তিনি খাবার মানের বিষয়েও অভিযোগ করেন। ডাক্তার বিশ্বেশ্বর চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার রোগির সেবা দিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় অনেক রোগি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।