দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃকুমিল্লা’র দেবিদ্বারে এক স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাবে উত্যক্ত করার ঘটনার মিমাংসায় ডাকা সালিসে, কথা কাটাকটির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় ৮/৯জন মারাত্মক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আব্দুল আউয়াল(৪০) নামে এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুরাম্পুর গ্রামের আড়াইবাড়ি আব্দুস সাত্তারের দোকানের সামনে। নিহত আব্দুল আউয়াল(৪০) একই বাড়ির ধনু মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় তরকারী ব্যবসায়ি ছিলেন। হামলায় আহতদের মধ্যে মারাত্মক আহত মোঃ আব্দুস সাত্তার(৪৫), মোঃ আবুল হাসেম(৫৫) ও মোঃ আবুল কাসেম(৫৫)কে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
এলাকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) রবিউল ইসলাম’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন রাখা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি- সার্বিক) মোঃ জহিরুল আনোয়ার, ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি- তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ’র নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক (এস,আই) ইফতিখার মিয়া, উপ-পরিদর্শক (এস,আই) আলমগীর হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এস,আই) রবিউল ইসলাম সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থল থেকে লাশের ছোরতহাল রিপোর্ট তৈরী পূর্বক লাশ থানায় নিয়ে আসেন।
এসময় প্রেমিক আসলামের পিতা মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান ও ভাই আজিজ মিয়া(৩০)কে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৬মাস পূর্ব থেকে রঘুরাম্পুর আড়াইবাড়ি’র মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান’র ছেলে আসলাম(২৩) একই বাড়ির আব্দুস সাত্তারের মেয়ে ও জাফরগঞ্জ মাজেদা আহসান মূন্সী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এস,এস,সি পরীক্ষার্থী (১৬)কে প্রেমের প্রস্তাবে উত্যক্ত করে আসছিল। এনিয়ে ছাত্রীর পরিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক সালিস করেছেন। উত্যক্তকারী আসলাম কুমিল্লা ভিক্টোরীয়া কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তার বাবা মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান রিক্সাচালক। স্কুলছাত্রীর পিতা আহত আবদুস সাত্তার জানান, আমার মেয়ে এবার জাফরগঞ্জের মাজেদা আহসান মূন্সী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার পূর্ব থেকেই রঘুরামপুর গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আসলাম মেয়েকে স্কুলে আসা- যাওয়া আসার পথে প্রায় উত্যক্ত করত। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান অফিসে কয়েকবার বিচার সালিস হলেও বখাটে আসলামকে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছিলনা। গত বৃহস্পতিবার সকালে আমার মেয়ে পাশবর্তী কালিকাপুর গ্রামে বেড়াতে যায়।
এ নিয়ে আসলাম আমাকে শাসাতে থাকে আমার মেয়েকে নাকি গুম করে রেখেছি। নিরাপত্তাহীনতার কারনে আমার মেয়েকে ওই দিন দুপুরে তার নানার বাড়ি থেকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ তার খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। ওই দিনই আসলাম কালিকাপুর মেয়ের নানার বাড়ি যেয়ে তাকে দেখতে না পেয়ে বাড়ি এসে চিৎকার করে গালমন্দ করতে থাকে। মেয়েকে তার হাতে তুলে না দিলে আমাকে সহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করারও হুমকী দেয়। এ ঘটনায় ওইদিন রাত অনুমান পৌনে ৮টায় রঘুরামপুর আড়াইবাড়ি’র আব্দুস সাত্তার’র নিজ দোকানের সামনে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিসে বসেন। সালিসের এক পর্যায়ে আসলামের পরিবারের সাথে বাগবিতন্ডা ও উচ্চবাক্য চলতে থাকে।
এসময় আসলাম সহ আরও ৮/১০ জন লাঠি, ছোরা, দা নিয়ে সাত্তার মিয়ার পরিবার ও পক্ষের লোকদের এলোপাতারি কুপাতে থাকে। আসলাম তার ছুরি দিয়ে আঃ আউয়ালের ঘাড়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মোঃ সোহরাব হোসেন জানান, ওই ঘটনায় একাধিক সালিসে মেয়েটিকে বিরক্ত না করতে আসলামকে বারন করা হয়েছিল। বৃস্পতিবার মেয়ের বাবাকে আবারো হুমকী দিয়েছে বলেও আমাকে জানায়। আমি এটা ২/১দিনের মধ্যে সমাধান করে দেবার কথা বললেও ওই দিন রাতে পারিবারিক সালিসে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আসলামের নেতৃত্বে হামলা ও ছুরিকাঘাতে আউয়াল নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন’র সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আঃ আউয়াল’র মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত আসলামের পিতা মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান ও তার ভাই আজিজ(৩০)কে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলা দায়েরের পরই আটককৃতদের কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করা হবে। তবে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয় । বাকী অন্যান্য অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। এলাকার শান্তি- শৃংখলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
Discussion about this post