জনতার কলামঃ১৯৭১ সালে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মৃত আবির হোসেন মোল্যার ছেলে মো. আবু সাহিদ মোল্যা তখন টগবগে তরুণ। চলা-ফেরায়, কথা-বার্তায় ছিল নিজস্ব স্বকীয়তা। দেশপ্রেমিক, পরোপকারী, আত্মপ্রত্যয়ী, স্বাধীনচেতা ও উদ্যমী এক যুবক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন আবু সাহিদ মোল্যা। প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যাওয়ার পথে রাজাকারদের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হন তিনি। ক্যাপ্টেন মুখার্জির নেতৃত্বে ৬ নভেম্বর ১৯৭১ সালে প্রথমে ভারতের ব্যারাকপুর ইয়োথ ক্যাম্পে এবং পরে টালিখোলা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে সনদসহ স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন। সাংবাদিকদের কাছে স্মৃতিচারণে এমনটাই বর্ননা দেন মুক্তিযোদ্ধা সাহিদ মোল্যা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২০০৩ সালে নিজ গ্রাম ছেড়ে লোহাগড়ার জয়পুর ইউনিয়নের চাচই মধ্যপাড়া গ্রামে পাঁচ সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। ২০১৮ সালে স্ট্রক করেন। প্রাণে বেঁচে গেলেও প্যারালাইসিস হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকেজ হয়ে যায়। চলাফেরা করেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না তিনি। অনেক কষ্টে বড়মেয়ে নার্গিসকে বিয়ে দিলেও সুখ জোটেনি তার কপালে। বিয়ের কিছুদিন পর নার্গিসের স্বামী স্ট্রক করে পাড়ি জমায় পরপারে। এক সন্তানসহ তাকে আবার ফিরে আসতে হয় অসুস্থ বাবার সংসারে। ২০১৭ সালে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শুরু করে সরকার। তখন রাষ্ট্রিয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেন মো. আবু সাইদ মোল্যা। সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি যাচাই বাছাই অন্তে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। সেই তালিকার ২৩৫ নং ক্রমিকে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চাচই পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আবির হোসেন মোল্যার ছেলে মো. আবু সাহিদ মোল্যা সঠিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনোনিত হন। সেই তালিকা ২০১৭ সালের ১৮ই মে চুড়ান্ত ভাবে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হলেও অদ্যাবধি তা আলোর মুখ দেখেনি। অসহায় পঙ্গু এই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
Discussion about this post