প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ৩৭ বছর হয়ে গেছে এ দলের সভাপতি হিসেবে। এতগুলো বছর থাকাটা বোধ হয় সমীচীন নয়। আওয়ামী লীগকে মনে হয় ধীরে ধীরে চিন্তা করতে হবে তাঁর নতুন নেতৃত্বের কথা।তিনি সততার সঙ্গে রাজনীতি করার এবং পাওয়া না পাওয়ার হিসেব না মেলাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু করবো সেটাই বড় কথা।বৃহস্পতিবার ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে গণভবনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।১৯৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর শেখ হাসিনা প্রবাসে দীর্ঘদিন রিফ্যুজি হিসেবে কাটাতে বাধ্য হবার পর আওয়ামী লীগ তাঁকে সভাপতি নির্বাচন করলে ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের প্রথমে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ,সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এবং ডা. দিপু মনি সহ দলের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর একে একে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, তাঁতি লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং মহিলা শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ১৯টি ক্যু করে সেনাবাহিনীর বহু মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার-সৈনিকদের হত্যা এবং বিমানবাহিনীর ৫৬২ জন কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে জানে না (ষড়যন্ত্রের বিষয়ে) ছুটিতে বাড়িতে ছিল তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে ফায়ারিং স্কোয়াডে দিয়ে মারা হয়েছে।
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যার ষড়যন্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, জিয়া তার দলের ভেতরের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে চট্টগ্রামে নিহত হন। জিয়া নিহত হবার পর বিচারের নামে প্রহসন করে ১২ জন তরুন অফিসারকে মারা হলো, অনেকে কিছুই জানে না ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছে তাকেও ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতা হত্যাকাণ্ড এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাক্ষিদের নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকার জন্যও দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আমরা হত্যার বিচার করেছি, কিন্তুু ষড়যন্ত্রের বিচারতো আর হয়নি, তদন্ত হয়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
আমরা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করছি এবং এই যুদ্ধাপরাদীদের বিচার করতে গিয়ে যারা সাক্ষি দিয়েছে তাদের ওপরও কিন্তু অনেক সময় অত্যাচার হয়েছে। কাজেই যার যার এলাকায় এটাও আমাদের একটু নজরে রাখতে হবে যারা সাক্ষি দিয়েছেন তাদের ওপর কেউ যেন অত্যাচার করতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ সাক্ষিদের নির্যাতন বা অত্যাচার করেন তাহলে তারাও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হবে এবং তাদেরও একেবারে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যারা দেশের গণতন্ত্র দেখতে পান না, তাদের কঠোর সমালোচনা করে এদেরকে সামরিক সরকারগুলোর পদলেহনকারী ও সুবিধাভোগী বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, সংগঠন যদি শক্তিশালী হয়, সংগঠনে যদি ঐক্য থাকে আর এই সংগঠন যদি জনগণের পাশে থেকে জনমত সৃষ্টি করতে পারে তখনই যেকোন কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়। যা আমরা বার বার প্রমাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এদিন তাঁর ভাষণে দেশে ফেরা থেকে শুরু করে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন এবং তাঁর অবর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব খোঁজার জন্যও দলীয় নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন ।
প্রধানমন্ত্রী ৩৭ বছর আগের ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ এই দিনে তাঁর স্বদেশে ফিরে আসার স্মৃতি রোমন্থনে বার বারই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেইদিন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই তাঁকে বরণ করে নেয়ার জন্য মানুষের যে ঢল দেখেছেন, মানুষের যে ভালবাসা পেয়েছেন তা তাকে এখনও আপ্লুত করে।মা-বাবা ভাই, পরিজনদের হারিয়ে বাংলার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ভালবাসাই তাঁকে চলার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের আশ্রয়েই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু।
Discussion about this post