মোঃ ফয়সাল এলাহীঃ চিটাগং নাম মুছে ফেললে বিশ্বে পরিচিতি ক্ষুণ্ন হবে। ঐতিহাসিক চট্টগ্রামের ইংরেজি নামের বানান Chittagong পরিবর্তন করে chattagram করা একটা ভুল সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে বলে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনের অভিমত। তাদের মতে ইংরেজি ভাষাভাষী দেশের মানুষ চট্টগ্রামকে চিটাগং হিসেবেই চেনে। চিটাগং নামটি মুছে দিলে এই শহর তাদের কাছে অপরিচিত হয়ে যাবে। হাজার বছরের পরিচিত ঐতিহ্যবাহী একটি নাম বাদ দিলে চিটাগং তথা পুরোদেশ আর্থিক ও বাণিজ্যিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলা নামের সাথে মিল করতে চিটাগং পরিবর্তন করে অফিসিয়ালি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নাম রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিষয়টি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকা) সভায় আগামী তে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় অনুমোদন হলে সরকারিভাবে চিটাগাং শব্দটি আর থাকবে না। বাংলা এবং ইংরেজিতে চট্টগ্রাম লিখতে হবে। সম্প্রতি মন্ত্রীপরিষদ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। নাম পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, চিটাগং নামটি শত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। ফ্রান্সে লন্ডনকে বলা হয় ‘লঁদখে’। ইতালিতে রোমকে বলা হয় ‘রোমা’। যেটি যেখানে যেভাবে পরিচিত সেভাবেই ডাকা হয়। একইভাবে ইংলিশ স্পিকিং দেশগুলিতে চট্টগ্রামকে বলা হয় চিটাগং। হঠাৎ করে নাম পরিবর্তন করা হলে ওইসব দেশের লোকজন চিটাগংকে চিনতে পারবে না। তাছাড়া তারা চট্টগ্রাম শব্দটি সহজে উচ্চারণও করতে পারবে না। তাই চট্টগ্রাম এবং চিটাগং শব্দ দুইটি যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে দেয়া উচিত। ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সিকান্দর খান বলেন, এইগুলি হচ্ছে অকাজের কাজ। নাম পরিবর্তনটা কে চাইল ? কেন পরিবর্তন করা হল ? কার মাথায় বিষয়টি এল ? এটি একটি উদ্ভট ব্যাপার। চট্টগ্রামবাসীর মতামত না নিয়ে এই ধরনের উদ্ভট উদ্যোগ নেয়া মোটেও উচিত হয়নি উল্লেখ করে বলেন, ইন্ডিয়াকে একবার ভারত বানানো হয়েছিল। সব জায়গায় ইন্ডিয়ার স্থলে ভারত লেখার উদ্যোগ নিয়েছিল তাদের সরকার। তা কিছুদিন ছিলও। কিন্তু বেশিদিন চালাতে পারেনি। বিদেশিরা ভারত চিনে না। তাতে তাদের ব্যবসা–বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। কারণ বিদেশিরা চেনে ইন্ডিয়াকে। চট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। কারণ বিদেশিরা চিটাগং চেনে। কারণ এটি একটি ঐতিহাসিক নাম। বিদেশিরা শত শত বছর ধরে বন্দরের কারণে চিটাগংকে চেনে। হঠাৎ করে নাম পরিবর্তন করলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নৃ–বিজ্ঞানী ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম সবার কাছে প্রচলিত একটি শব্দ। এই শব্দটি আমরা ভালভাবেই গ্রহণ করেছি। অপরদিকে চিটাগং শব্দটির সাথে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাণিজ্য সবকিছুই জড়িত। আমাদের আত্মপরিচয়, আবেগ সবকিছুই জড়িত। উপনিবেশিক আমল কিংবা তার আগে থেকেই বিশ্ব চিটাগংকে চেনে। তাই আমার মনে হয় চট্টগ্রাম এবং চিটাগং দুইটি যেভাবে চলছে সেভাবেই চলা উচিত। তাছাড়া নাম দুইটি নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের কখনো দুর্ভাবনা কিংবা অভিযোগও ছিল না। নাম পরিবর্তনের জন্য কেউ কখনো কোথাও আবেদন করেছে বলেও আমাদের জানা নেই। নাম পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। তবে যেসব জেলা কিংবা অঞ্চলের নাম বানান ভুল আছে সেসব জেলার নাম শুদ্ধ করার সুযোগ আছে। ফাউন্ডেশন ফর অটিজম রিসার্চ এন্ড এডুকেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের সাবেক কেবিনেট সেক্রেটারি মো. মাহাবুবল হক খান বলেন, চিটাগং নামটি পরিবর্তন করার কোন গুরুত্ব আছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। বরং পরিবর্তন না করলেই সুন্দর হবে। আমরা আরবী, হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষা থেকে অনেক শব্দ গ্রহণ করেছি। ওইসব শব্দের বাংলা শব্দও আছে। আমরা কি তার পরিবর্তন করেছি। করবোও না। আর কেউ তো নাম পরিবর্তনের কথা কখনো বলেনি। আর এই কাজ করতে গেলে সরকারের অন্তত একশ কোটি টাকা খরচ হবে। দেশে–বিদেশে সব জায়গায় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নানা জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে। এটি জটিল এবং কঠিন একটি কাজ। অযথা এই পরিবর্তন না করাই ভাল বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
Discussion about this post