জনতার কলাম-সাংবাদিক সাহিদ আহম্মেদ খানঃদেশের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি শ্রেনি পাঠদানের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসও চালু ছিলো, যা বিভিন্ন চ্যানেল বা ইউটিউবে প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাই। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় সরাসরি শ্রেনি পাঠদান কার্যক্রম। দীর্ঘসময় শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখায় খেই ফেলে এবং অভিভাবকেরাও চিন্তিত হয়ে পড়েন ।
করোনা মহামারি প্রকট আকারে শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে সংসদ টিভিতে অনলাইন ক্লাস প্রচারিত হয়, যা পরিচালনা করতো দেশের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং দেশসেরা শিক্ষকগণ। সময়ে আবর্তে সারাদেশে করোনা দূর্যোগ মুহূর্তে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কিছু প্রাইভেট স্কুল ও কলেজসমূহে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস বিস্তৃতি লাভ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরুতে সংসদ টেলিভিশনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও এখন তা ব্যাপক আকারে সারাদেশ ব্যাপি এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং চলমান রেখেছে।
শুরুর দিকে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের আগ্রহ না থাকলেও ধীরে ধীরে অনলাইন ক্লাস তথা “ঘরে বসে শিখি” অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে এবং পড়ালেখায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।স্বল্প পরিসরে শুরুহলেও বর্তমানে অনলাইন ক্লাসের পরিধি যেমন বাড়ছে তেমনি অনলাইন ক্লাস পরিচালনাকারী শিক্ষকেরাও ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন, এতে অভিভাবকসহ সুশীল সমাজের প্রচুর প্রশংসা পাচ্ছেন। “ঘরে বসে শিখি” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখায় মনযোগী হচ্ছে এবং তা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এখন অনলাইন ক্লাসই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের একমাত্র ভরসাস্থল, এতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে নির্বিঘেœ পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছে।
শিশুরাও বাবা-মায়ের কাছে থাকায় বাড়তি আদর-যত্ন পাচ্ছে, পরিবারের অন্যদের সাথে মিলেমিশে খেলাধুলা ও আনন্দ করতে পারছে এবং মা-বাবাও সন্তানকে পড়ালেখায় বেশী সময় দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।শুরুতে একটি অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করাও অনেক কষ্টকর, সময় সাপেক্ষ এবং খরচের ব্যাপার আছে। তারপরও শিক্ষকেরা পিছিয়ে নেই এই দুর্দিনে, যার যা কিছু হাতের নাগালে আছে তা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রম। শিক্ষকেরাও কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট শিডিউল মোতাবেক নিয়ম করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার পাঠ পরিচালনা করছেন এবং শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। “ঘরে বসে শিখি” অনুষ্ঠান বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে দারুন সাঁড়া ফেলেছে এবং তা দিন দিন জনপ্রিয়তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
শুরুতে এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পাঠে অনিচ্ছাকৃত এবং কারিগরি ভুলত্রুটি থাকলেও এখন শিক্ষকেরা ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণীয় পাঠ উপহার দিচ্ছেন। অনলাইন ক্লাস নিতে হলে শিক্ষকদের ২/১ দিন আগে থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হয় এবং পাঠ রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের ছবি, পোষ্টার পেপারসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ বা হাতে-কলমে তৈরি করতে হয়। একটি পাঠে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিকট প্রাণবন্ত করে তুলতে হয় এবং পরবর্তীতে অনলাইনে সাবমিট করা হয়। একটি ক্লাস রেডি করতে একজন শিক্ষককে কি পরিমান পরিশ্রম করতে হয় তা না বললেই নয়, যেমন একটি ভালো মানের ক্যামেরা বা স্মার্টফোন, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা স্ট্যান্ড, হোয়াইট বোর্ড, ফোকাস লাইট, সাউন্ডলেস রুম এবং সর্বশেষ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিও এডিটিং করে তা প্রচার উপযোগী করে সম্প্রচার করা বা অনলাইন পেইজে পোষ্ট দেওয়া।
এভাবেই একজন শিক্ষার্থী “ঘরে বসে শিখি” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘরে বসে তা দেখতে পারে এবং সর্বোপরি পড়ালেখা সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী জটিল হচ্ছে ভিডিও এডিটিং এর কাজ যা একজন দক্ষ এডিটর ছাড়া সম্ভব নয়, ফলে কিছু শিক্ষক প্রয়োজনীয় এডিটিং করতে পারেননি বলে তাদের পাঠাদান করা ভিডিওগুলো অস্পষ্ট এবং সাউন্ড ক্লিয়ার না, ফলে শিক্ষার্থীদের তা বুঝতে বা দেখতে কষ্ট হয়। করোনা মহামারি দূর্যোগেও বিভিন্ন জরুরী ডিপার্টমেন্ট এর মত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরাও হাতে তুলে নিয়েছেন স্মার্টফোন এবং তা দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছেন প্রতিদিনের ক্লাস। এখন অনলাইন ক্লাসের পরিধি সংসদ টিভির বাইরেও বিভিন্ন স্কুলের পেইজ, জেলা ও উপজেলা অনলাইন পেইজসহ বিভিন্ন শিক্ষকের পার্সোনাল বøগে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। এইসব ক্লাস দেখে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের পড়া ঘরে বসে শিখতে পারছে, এতে তাদের শিখন অগ্রগতি ও ফলপ্রসূ হচ্ছে এবং অভিভাবকরাও চিন্তামুক্ত হচ্ছে।
এখন সকলেই চায় যতদিন পর্যন্ত করোনা মহামারি দূর্যোগ থাকবে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনলাইন ক্লাস চালু রাখা যাতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ না হয়।মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের খুব একটা কষ্ট না হলেও সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের কারণ প্রতিটি পাঠ ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হয় এবং সে অনুযায়ী পাঠ পরিচালনা করতে হয়। প্রাথমিকের একজন শিক্ষককে একটি পাঠ পরিচালনা করার পূর্বে হোয়াইট বোর্ড নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিতকরণ করতে হয়। তাছাড়া প্রাথমিকের অধিকাংশ সিনিয়র শিক্ষকের ইন্টারনেট ব্যবহার বা স্মার্টফোন ব্যাবহারের দক্ষতাও কম, ফলশ্রæতিতে তাকে অন্যকোন সহকর্মী বা পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয়।
প্রাথমিকের একজন শিক্ষককে নিয়মিত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন-শিখানো কাজের অগ্রগতি তদারকি করতে হয় এবং তা পর্যালাচনা করতে হয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত “ঘরে বসে শিখি” অনুষ্ঠান দেখছে কিনা এবং হোম ওয়ার্ক ঠিকমত করছে কিনা এ ব্যাপারে শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন, এছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
Discussion about this post