হাতের মেহেদির রং না মুছতেই মিলল নববধূ স্বর্ণা আক্তার মিম(১৮)’র ঝুলন্ত লাশ। প্রেমের বিয়ে তাই মেনে নেয়নি শশুরবাড়ির লোকজন। স্বামীর বাড়ি যাওয়ার অনিশ্চয়তায় রাগে ক্ষোভে ওই গৃহবধূ পিতার বাড়ির পুকুরপাড়ের বাঁশঝারের একটি আমগাছের ডালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে জানাযায়।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার দিবাগত ভোর রাতে দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী (উত্তরপাড়া) গ্রামের ফকির বাড়ির পাশে। সংবাদ পেয়ে দেবিদ্বার থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে।
তবে পরিবারের দাবী এটি আত্মহত্যা নয় তাকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে লাশ দেখতে ওই বাড়িতে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
স্থানীয়রা জানায়, গত ১৯ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী উত্তর পাড়া বক্সআলীর বাড়ির মৃত মোঃ সামসুল হক (সুন্দর আলীর)’র মেয়ে ধামতী হাবিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরীক্ষার্থী স্বর্না আক্তার মিম’র সাথে একই গ্রামের রহিম মাস্টার ছেলে মোঃ কামরুল হাসান’র সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারণে কোর্টে বিয়ে হয়।
ছেলের পরিবার এ বিয়ে মেনে না নেওয়ায়, বিয়ের পর থেকে মিম তার বড় বোনের বাসায় দেবিদ্বারে থাকতেন। তার মা নাজমা বেগম ঢাকায় আত্মীয় বাসায় বেড়াতে যায়। গত শনিবার নিহত স্বর্ণা দেবীদ্বার বোনের বাসা থেকে ধামতী বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সে তার ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিল আহমেদকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার সময় তার বড়বোন শিল্পি আক্তার মেবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায়, পাশের ঘরের চাচিকে ফোন করে বিষয়টি বলেন। এসময় স্বর্নার বড় চাচা সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী স্বর্না আক্তার মিম’র দরজায় গিয়ে ডাকাডাকি করলে এক পর্যায়ে তার ছোট ভাই ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখেন বোন ঘরেনেই। ঘরের পিছনের দরজা খোলা। ডাকা ডাকি করে না পেয়ে ঘরের পেছনে পুকুর পাড়ে গাছের সাথে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।
ধামতী ইউপি যুবলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, ফাঁসির ঘটনায় থানা পুলিশকে জানালে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) ওমর ফারুক একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নববধূ স্বর্ণার আক্তার মিম’র লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নিহতার স্বামী মোঃ কামরুল হাসান জানান, সে কুমিল্লা কমার্স কলেজে শিক্ষকতা করতেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে কলেজ বন্ধ থাকায় দেবিদ্বার তার বড় ভায়রা ভাইয়ের ব্যবসা দেখা শোনা করেছিলেন এবং বৌ নিয়ে ভায়রা ভাই আইয়ুব আলীর বাসায় থাকতেন কিন্ত আমার স্ত্রীর সাথে বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো পারিবারিক কলহ ছিল না, রাত ১২টার দিকে তার সাথে ফোনে কথা বলেছি। ভোর রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে তার মৃত্যুর সংবাদে পেয়ে দেবিদ্বার থেকে ধামতী এসেছি, আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করতে পারে না, হয়তো তাকে কেউ হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান জানান, নিহতার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলেই নিশ্চিত করে বলা যাাবে। তবে বিষয়টি তদন্তাধিন।