জনতার কলাম,মোঃ ফয়সাল এলাহীঃ উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি’। রবিঠাকুরের কথার মতোই কৃষ্ণচূড়া মঞ্জরির হাতছানি শাখায় শাখায়। ঝিরিঝিরি সবুজ পাতার মাঝে একটি দু’টি লালরঙা ফুল। কোথাও কোথাও সবেমাত্র আগল খুলেছে কুঁড়ি। যেন নবসাজে নববধূর অবগুন্ঠিত বেশ! তবে ফুল ফোটার আগেই মোহরের মতো কলিতে ভরে গেছে গাছগুলি। তাই হয়তো কৃষ্ণচূড়ার আরেক নাম গুলমোহর। উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী মোহাম্মদ রফির গানে প্রকাশ পেয়েছে এমনি উপমা ‘গুলমোহরের ফুল ঝরে যায় ডালে ডালে শাখায় শাখায়’। আকাশে গনগনে সূর্য, কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। এ যেন গ্রীষ্মের চিরচেনা রূপ। কিন্ত এ গ্রীষ্ম কেবল আগুন ঝরায় না, লালরঙ কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে মনও কাড়ে। কৃষ্ণচূড়া এ সময় নিষ্প্রাণ প্রকৃতির রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। ঋতুচক্রের আবর্তনে আবারো মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের দাবদাহে শহর সাজছে লাল কৃষ্ণচূড়ায়। তাই বলা যায় ‘কৃষ্ণচূড়া আগুন জ্বলে, রঙে রঙে রং মশাল জ্বালে, আমি কস্তুরি যে নিজের গন্ধ নিজেই ভুলি’। অথবা ‘সেই কৃষ্ণচূড়ার গাছ আজও মরেনি, মরেছে মনের যত আশা’। এভাবেই বাঙালি কাব্য আর সাহিত্যচর্চায় এই কৃষ্ণচূড়া এসেছে বার বার। উইকিপিডিয়া সূত্রে, কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডেলানিক্স রেজিয়া’। এই গাছ চমৎকার পত্র–পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তগর্ত একটি বৃক্ষ যা ‘গুলমোহর’ নামেও পরিচিত। তিনরঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা পাওয়া যায়। লাল, হলুদ আর সাদা। একেবারে কালেভদ্রে দেখা মেলে সাদা কৃষ্ণচূড়ার। কোথাও কোথাও হলুদ কৃষ্ণচূড়ার দেখা পাওয়া গেলেও অনেকটাই বিলুপ্তির পথে এখন এটি। এই ফুলের গাছ শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এর সাক্ষাৎ ঘটে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধুমাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। ভারতবর্ষে সাধারণত এপ্রিল–জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। দক্ষিণ ফ্লোরিডায় জুনে, ক্যারিবিয়ানে মে থেকে সেপ্টেম্বরে, ভারতে এপ্রিল থেকে জুনে, অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে মে থেকে জুলাই। চৈত্রশেষে বৈশাখেই কৃষ্ণচূড়ার আগুনরঙা লালে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। আর কৃষ্ণচূড়ার আবির মেখে যেন হোলি খেলছে আকাশ। সূত্র জনতার কলাম