প্রতিদিন সাইকেল চাপিয়ে আজও এসেছিলেন ডিউটিতে। রাস্তার পাশে সাইকেলটি রেখেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। আবার এই সাইকেলেই চেপেই পড়তে যেতেন নামাজ, দায়িত্ব শেষে ফিরে যেতেন স্বজনের কাছে। কে জানতো, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মায়ার এ পৃথিবী ছাড়তে হবে মনিরুলকে, মনিরুল নেই, রাস্তার পাশে পড়ে আছে সাইকেলটি। স্ত্রী, দুই মেয়ে আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সংসার কনস্টেবল মনিরুলের। অ্যাম্বুলেন্স করে মনিরুলের লাশ নেওয়া হচ্ছে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে।
মনিরুলের অকাল মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে পুলিশ পাড়ায়। চলছে স্ত্রী-সন্তানদের আহাজারি। আর সাইকেলটি ঘিরেই সহকর্মীদের মুখে ফুটছে স্মৃতির বুলি শনিবার সকালে দুর্ঘটনার আগে ঝাউতলা রেলগেটের এক পাশে গেট খোলা থাকায় ওই পাশ দিয়ে রেললাইনে উঠে পড়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পো। সেখানে গাড়িগুলোকে থামানোর চেষ্টা করার সময় ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৪৯ বার পুরস্কার বিজয়ী পুলিশের এ সৎ সদস্য নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামের কে বি এম ফয়েজ হোসেনের ছেলে মনিরুল। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটি সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবার কথা। একমাত্র ছেলেটি পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে।
সন্তানদের নিয়ে কি করবেন, কোথায় যাবেন, কে পাশে দাঁড়াবেন এই চিন্তায় বিলাপ করতে করতে মুর্ছা যাচ্ছিলেন মনিরুলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার।
হাসপাতালে মনিরুলের স্ত্রী, সন্তান আর স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে আসে আশপাশের পরিবেশ।
কান্না জর্জরিত কণ্ঠে মনিরুলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী চলে গেছে। আমরা এখন কি করবো, কার কাছে যাবো? আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কোথায়, কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে?
মনিরুলের অকাল মৃত্যুতে শোক নেমে আসে পুলিশ পাড়ায়। মনিরুল খুবই সৎ মানুষ ছিলেন। মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার চিন্তা করতেন সব সময় এমনটাই উঠে আসছে মনিরুলের সহকর্মীদের মুখ থেকে।
চট্টগ্রাম ট্রাফিক উত্তর বিভাগের টিআই মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, মনিরুল সাহেব খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। উনার একটা সাইকেল ছিলো। সেটা চালিয়ে তিনি কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করতেন। খুবই কষ্ট করতেন কিন্তু কখনো সততার বিসর্জন দেন নি।
মনিরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন তিনি পুলিশে যোগদান করেন। সিএমপিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৭ জুন। ট্রাফিক উত্তরে বিভাগে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৮ জুন। পুলিশের চাকরি জীবনে মনিরুল ইসলাম কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ৪৯ টি পুরস্কার পান। এদিকে নিহত মনিরুলের লাশ অ্যাম্বুল্যান্সে করে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পথে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি তদন্ত সাদিকুর রহমান। তিনি বলেন, মনিরুলের মরদেহ ময়নাতদন্তসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রামে পোছে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।