সংসদ নির্বাচনের বছরখানেক বাকি থাকলেও এখনই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগরের ১৬ এমপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ৫০ জন তরুণ প্রার্থী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, এনপিপিসহ বিভিন্ন দলের ব্যানারে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এসব তরুণ। মনোনয়ন পেলে এটিই হবে তাদের প্রথম সংসদ নির্বাচন। মনোনয়নপ্রত্যাশী এ তরুণরা এলাকায় দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ ও খাবার সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় করছেন। তরুণদের কেউ স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, কেউ দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন।
তবে এলাকায় দলের বাইরে স্বতন্ত্র নেটওয়ার্কও রয়েছে তাদের। তারা মনে করছেন, বর্তমান এমপিদের অনেকেই বিতর্কিত হওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে তারা ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন। এমন হলে নগরীর কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহাবুবুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি (মরহুম) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মজিবুর রহমান ও কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনকে। নওফেল চলতি মাসে বাকলিয়া উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। শাহাদাত গত সপ্তাহে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। আর এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নিয়মিত সাহায্য দিচ্ছেন মজিবুর।
আবার চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহাবুবুল আলমের এলাকাতেই পড়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। তিনি খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি। একইভাবে নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনে দেখা যেতে পারে চিটাগাং চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পার্টির মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে। এর আগে হালিশহর-পাহাড়তলী আসন থেকে চাইলেও এবার দলের প্রয়োজনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বন্দর-পতেঙ্গা থেকেও। হালিশহর-পাহাড়তলী আসনে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী দৌড়ে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এমএ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, মহানগর যুবলীগ সভাপতি মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার বলেন, ‘অনেক বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। বাবারও আওয়ামী রাজনীতিতে আছে বিপুল প্রভাব।’ হালিশহর-পাহাড়তলীর পাশাপাশি বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকেও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান তিনি। সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘দল যদি প্রার্থী পরিবর্তনে আস্থা রাখে তবে আমার আশাই পূর্ণ হবে।’ মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘আমি গতবারও মনোনয়নপত্র নিয়েছিলাম। আশা করছি, এবার নিলেও আগের মতো প্রত্যাহার করতে হবে না।’ দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, ‘নানা দিক বিবেচনা করে এ আসনে এবার নতুনের ওপর আস্থা রাখতে পারে দল।’ ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, নিরাশ হবো না।’ নগরীর চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকেও মনোনয়ন চাইবেন নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মজিবুর রহমান। এ ছাড়াও আছেন বিএনপির এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম। সীতাকুণ্ডে প্রার্থী হতে চাইছেন উত্তর জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সীতাকুণ্ডের উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন এবং প্যাসিফিক জিন্সের পরিচালক সৈয়দ মো. তানভীর।
এসএম আল মামুন বলেন, ‘এ আসন থেকে বাবা আবুল কাশেম মাস্টার একাধিকবার এমপি হয়েছেন। তার মৃত্যুর পর এখানে যোগ্য নেতার সংকট তৈরি হয়েছে। দল চাইলে আমি এ শূন্যস্থান পূরণ করতে চাই।’ ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম থাকার পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে সৈয়দ মো. তানভীরেরও। মিরসরাইয়ে এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অসুস্থ হওয়ায় এবার সেখানেও নির্বাচনী তৎপরতায় দেখা যাচ্ছে তরুণদের। এখানে এমপির ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেল, খুলশী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বড়তাকিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী থাকবেন মনোনয়ন দৌড়ে। মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন, ‘মিরসরাই থেকে বাবা এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করলে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’ আরেক প্রার্থী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, ‘মিরসরাইয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের কোন্দল তীব্র। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দল নিরপেক্ষ কাউকে বেছে নিলে প্রার্থী হতে পারি।’ বিএনপির শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে যুক্ত আছি। এবার মনোনয়ন চাইব।’ সন্দ্বীপে তরুণদের মধ্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র জাফরুল্লাহ টিটু, বিএনপির পক্ষে আমেরিকা প্রবাসী মোস্তফা কামাল ও এনপিপির পক্ষে মুক্তাদের আজাদ খান মনোনয়ন চাইবেন।
ফটিকছড়িতে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে থাকতে পারেন সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ও প্রয়াত ড. মাহমুদ হাসানের ছেলে আকতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী কিংবা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী। রাউজানে তরুণ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। রাঙ্গুনিয়ায় মনোনয়ন চাইতে পারেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলী শাহ, উপজেলা বিএনপি সভাপতি শওকত আলী নূর কিংবা অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার। পটিয়াতে তরুণ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃৃতি বিষয়ক সম্পাদক ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি লায়ন শামসুল হক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম, উত্তর জেলা বিএনপির সহসভাপতি এনামুল হক এনাম।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নির্বাচন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি মজিবুর রহমান, লোহাগাড়া উপজেলা যুবদল সভাপতি আসহাব উদ্দিন ও এলডিপির উপজেলা সভাপতি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে নির্বাচনী দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আসিফ, চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে ডা. মহসিন জিল্লুর করিম কিংবা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে। বাঁশখালীতে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির চৌধুরী লিটন ও জেলার অর্থ সম্পাদক মুজিবর রহমান। আনোয়ারায় তরুণদের মধ্যে মনোনয়ন চাইবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন, সৌদি প্রবাসী বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। হাটহাজারীতে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল, সাবেক এমপি সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনজুর আলম মনজু।সমকাল হতে সংগ্রহ
Discussion about this post