জনতার কলামঃ গ্রাম আদালত প্রসঙ্গে গ্রামের জনগোষ্ঠী সাধারণত হতদরিদ্র এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গ্রামবাংলার দরিদ্র জনগ্ষ্ঠোীর ছোটখাটো বিরোধ খুব স্বল্প সময়ে অল্প ব্যয়ে নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় সরকারের আওতায় গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। গ্রাম এলাকায় বিচারপ্রাপ্তির জন্য জজ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মামলা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘদিন চলে যায়। এ সময়ের মধ্যে যাতায়াত, হাজিরা, উকিল খরচ প্রাসঙ্গিক মিলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। সে ব্যয় নির্বাহের জন্য অনেকে হালের বলদ, পোষা ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এভাবে বিচারের নামে হতে হয় নিঃস্ব। অপরদিকে জজ আদালতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ মামলা জট। তাই আদালতে মামলার চাপ কমানো, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা ও প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এ গ্রাম আদালত। এক সময় আমাদের সমাজে যে পঞ্চায়েতি বিচারব্যবস্থা ছিল, সেটার সংঙ্কারণই হচ্ছে আজকের গ্রাম আদালত। গ্রাম আদালতে বিচার্য মামলায় থানা বা অন্য কোনো আদালতের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে গ্রাম আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জজ আদালতে বিভিশন আবেদন করলে সহকারী জজ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। গ্রাম আদালতে যেহেতু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যদের সমন্বয়ে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়, তাই এতে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার সুযোগ যেমন কম থাকে তেমনি কোনো ঘটনার প্রকৃত সত্যতা যাচাই করে এর সুষ্ঠু সমাধান দিতে সক্ষম হন। এখানে বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকতা মাত্র সমাধান হয় বন্ধুত্বসুলভভাবে। কোনো বিষয় নিষ্পত্তির পর সেটার পুনরাবৃত্তি রোধে তারা পরবর্তীতেও খোঁজখবর রাখতে পারেন। বর্তমানে এ আদালতের মাধ্যমে গ্রামীণ হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী ব্যাপক সুফল ভোগ করছেন। গ্রাম আদালত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিচারপ্রাপ্তির সবচেয়ে কাছের এবং সহজলভ্য প্রতিষ্ঠান হলেও এখনও কিছু সমস্যা বিরাজমান আছে। মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাপকভাবে এর সুফল পৌঁছে দিতে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রচারের অভাবে মানুষ এখনও পুরোপুরি সচেতন বা অনেকের গ্রাম আদালত সম্পর্কে ধারণা নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও গ্রাম আদালত সক্রিয় নয়। অনেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারদের যথাযথ শিক্ষাযোগ্যতা না থাকা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তাদের এ সম্পর্কে তেমন ধারাণাও নেই। তাছাড়া গ্রাম আদালতে বিচার্য মামলায় থানার সীমাবদ্ধতা থাকলেও অনেক জায়গায় থানার হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রাম আদালতের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দেশের সব ইউনিয়নে গ্রাম আদালত কার্যক্রম সক্রিয় করে তুলতে হবে, যারা বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং গ্রাম আদালতে বিচার্য মামলায় থানার হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এ আদালত যাতে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির দ্বারা আক্রান্ত না হয়, বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মনিটরিং রাখাসহ সব ধরনের অসঙ্গতি দূর করতে হবে।
Discussion about this post