ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে প্রকাশ্যে পিটুনির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মতোই কিছু জানা নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের। বলেছেন, কোনো ছাত্র যদি অভিযোগ করে তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে যোগ নিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা নিয়ে।
মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, যারা কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশ ভেতরে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর পুলিশ কখনও ঢুকবে না। ছাত্ররা ছাত্ররা কী করেছে সেটা জানা নেই। কোন ছাত্র যদি বিচার দেয় তাহলে আমরা দেখব।’
এর আগে রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন এবং এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা হয়েছে গত শনিবার। সেদিন সব কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম, টেলিভিশন, জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ এবং পরদিন সব কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে খবরটি। সেই সঙ্গে ফেসবুকে চলছে তোলপাড়।
এই হামলার প্রতিবাদে দুই দিন পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কর্মসূচিতেও হামলা হয়। সেখানেও পিটুনির পর দুই জনকে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এর পাশাপাশি কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁন ফেসবুক লাইভে এসে ‘রক্ত গরম হয়ে গেছে’ জানিয়ে অন্যদেরকেও রাজপথে নামার আহ্বান জানান। বলেন, ‘মনে হয় এটা তার বাপের দেশ’। এর প্রতিক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার পর সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকেও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কোটা নিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্তদের ওপর হামলা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও।
এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা কী করেছে, সেটি জানা না থাকার কারণ অবশ্য বলেননি মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলছিলেন রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের এক অনুষ্ঠানে। ঢাকা দ্য খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের ৬৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রী মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোটা নিয়ে আবার আন্দোলনের পেছনে যুক্তি নেই। তিনি বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলন অযৌক্তিক। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোন প্রয়োজন নেই। তিনি বলে দিয়েছেন কোনো কোটা নেই।’
সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন কোনো কোটা থাকবে না। গত ২৭ জুন সংসদে দেয়া ভাষণেও একই কথা বলেন তিনি।
তবে আন্দোলনকারীরা প্রজ্ঞাপনের দাবিতে অস্থিরতা দেখাচ্ছে। আর তাদের নেতা রাশেদ খাঁনের ২৭ জুনের ভিডিও বার্তার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠে।
তবে এরই মধ্যে কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি কমিটি হয়েছে। আর ১৫ দিনের মধ্যে এই কমিটি প্রতিবেদন দেবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কিছু জটিলতা আছে। সেগুলো নিরসনের জন্য কাজ করছেন কেবিনেট সেক্রেটারি এবং অন্যান্যরা কাজ। এই কমিটির মাধ্যমেই নির্ধারণ হবে এই কোটার বিষয়টি কীভাবে বাতিল হবে। কোটা নিয়ে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।’
Discussion about this post