ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুল হাসান। নগরের হালিশহর পোর্ট কানেকটিং রোডের ১৬১৭ মুনাফ প্লাজার কমিশন এজেন্ট ও সাপ্লাইয়ার্স প্রতিষ্ঠান এমএম করপোরেশনের মালিক তিনি। এমন পরিচয়ে ঢাকা ব্যাংকের হালিশহর শাখায় খুলেছিলেন হিসাব (নম্বর-০২৩১৫০৩৮৬)। কিন্তু তদন্তে বের হয়ে আসে তার অন্য পরিচয়।
ভুয়া ঠিকানায় এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে খুলেছিলেন এ ব্যাংক হিসাব। যাতে ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ২ হাজার ১২৭ টাকা।
মো. মাহমুদুল হাসান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত চট্টগ্রামের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম আলোর অন্যতম সহযোগী। ভুয়া ব্যাংক হিসাব খুলে লেনদেন করতেন ইয়াবা ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম আলোর টাকা। জাহেদুল ইসলাম আলোর ব্যাংক হিসাব লেনদেনের তথ্য তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য অধিদফতরের তদন্ত কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই শের আলী নামের এক মোবাইল চোর আদালতে জবানবন্দি দিলে চোরাকারবারি হিসেবে প্রথম নাম আসে আলোর। জবানবন্দিতে শের আলী জানান শহরের চুরি করা সব মোবাইল ও ল্যাপটপ বিক্রির আড়ত হালিশহরের জাহেদুল ইসলাম আলোর দোকান। ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাহেদুল ইসলাম আলোর হালিশহরের বাড়ি থেকে ২ লাখ ১২ হাজার ৬৯০ পিস ইয়াবা ও নগদ ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫৫ টাকা উদ্ধার করে র্যাব-৭। গ্রেফতার করা হয় জাহেদুল ইসলাম আলো ও তার পাঁচ সহযোগী। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও মানিলন্ডারিং আইনে জাহেদুল ইসলাম আলোর বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়। ২০১৫ সালের মে মাসে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান জাহেদুল ইসলাম আলো। পরে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট নগরের আকবরশাহ এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন জাহেদুল ইসলাম আলো। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা, ১টি পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় আকবরশাহ থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়।
মানিলন্ডারিংয়ের মামলা তদন্তকালে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জাহেদুল ইসলাম আলো মেসার্স খাজা টেলিকম, মেসার্স খাজা ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনাল, খাজা টেলিকম ও জাহেদুল ইসলাম নামে ৭টি ব্যাংকে মোট ১৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ১টি, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের স্টেশন রোড শাখায় ১টি ও আগ্রাবাদ শাখায় ১টি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখায় ২টি, পাহাড়তলী শাখায় ১টি, স্টেশন রোড শাখায় ১টি, আইএফআইসি ব্যাংকের অলংকার মোড় শাখায় ৩টি, ইসলামী ব্যাংকের স্টেশন রোড শাখায় ১টি, ব্র্যাক ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ১টি, ঢাকা ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখায় ১টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
এসব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন তদন্তে উঠে আসে কথিত ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুল হাসানের নাম। মাহমুদুল হাসান নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার ফতেপুর এলাকার মো. গোলাম মোস্তফার ছেলে। মাহমুদুল বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর আই ব্লকের ১ নম্বর রোডে থাকেন।
তদন্তে নাম আসার পর গত ১১ জুন রাতে হালিশহরের বাসা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাহমুদুল হাসানকে গ্রেফতার করেন। এ সময় তার কাছ থেকে ৭টি চেক ও ৭টি ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।
একই দিন হালিশহর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আলী আসলাম বাদি হয়ে মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে ১টি মামলা (নম্বর-১২) দায়ের করেন।
চট্টগ্রাম আদালত সূত্র জানায়, সোমবার (০৯ জুলাই) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী। আদালত মাহমুদুল হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের করা একটি মামলায় মাহমুদুল হাসানকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালত।
মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম আলোর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন তদন্তে উঠে আসে কথিত ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুল হাসানের নাম। মো. মাহমুদুল হাসান জাহেদুল ইসলাম আলোর ইয়াবা ব্যবসার টাকা লেনদেন করতেন বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। এটি বড় একটি চক্র। এ চক্রের অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে মো. মাহমুদুল হাসানকে রিমান্ডে নিয়ে আসা হচ্ছে।
Discussion about this post