বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদৌ অসুস্থ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। বিএনপি নেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব কথা তার দলের নেতা এবং চিকিৎসকরা বলছেন তাকে বাহানা হিসেবে দেখছেন মন্ত্রী।
‘বাহানা’য় কাজ হবে না জানিয়ে মতিয়া এমনও বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জেল খেটেই বের হতে হবে।
শনিবার বিকালে পাবনা শহরের পুলিশ লাইনস মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন মতিয়া। বলেন, ‘একজন ভদ্র মহিলার এতিমের টাকা চুরি করার জন্য জেল হয়েছে। এখন আবদার, ওনাকে জেল থেকে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যরা চুরি করে জেল খাটবে, ওনি জেল খাটবেন না।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বন্দী খালেদা জিয়া ভীষণ অসুস্থ বলে দাবি করছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং দলের নেতারা। তারা খালেদা জিয়াকে বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেডে নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
গত এপ্রিলে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একজন বলেন, খালেদা জিয়া পক্ষাঘাতে (প্যারালাইজস) আক্রান্ত হতে পারেন, অন্য একজন বলেন তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। আরেকজন বলেন, তার প্রশ্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৯ জুন কারাগারে বিএনপি প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে তিন চিকিৎসক দাবি করেন, খালেদা জিয়া অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তার মৃদু স্ট্রোক হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি না করলে তার বড় ধরনের স্ট্রোক হতে পারে।
এরপর সরকার খালেদা জিয়াকে সিএমএইচে চিকিৎসা নেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি সেখানে যাবেন না বলে জানিয়ে দেন।
খালেদা জিয়া আদৌ অসুস্থ কি না, সে প্রশ্ন তুলে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ওনার চিকিৎসার কথা বলা হয়, ওনি নাকি হাঁটতে পারেন না, ওনি একটুতেই হেলে পড়েন। আমি বলতে চাই, আপনি যখন আপনার স্বাস্থ্য চেকআপের জন্য বঙ্গবন্ধুতে এসেছিলেন, তখন তো আপনার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ছিল, কিংবা হুইল চেয়ার ছিল, আপনি সব কিছু থুইয়া দিয়ে গটগট কইরা গিয়া লিফটে উঠলেন।’
‘ও লিফটে ওঠার সময় আপনার পায়ে ব্যাথা হয় না, আর যখন আপনি খানার জন্য কাইন্দ্যা মরেন, তখন আপনি অসুস্থ, আপনার পার্টির লোকেরা বলে আপনি অসুস্থ!’-বলে যান মতিয়া।
সিএমএইচে না যাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে বিএনপি নেত্রীকে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম জিয়া, আপনি তো মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার স্বামীর চিঠি উপেক্ষা কইরা অন্য সবাইরে ফালাইয়া থুইয়া আপনি জানজুয়ার মেহমান হয়েছিলেন, পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ারের মেহমান হয়েছিলেন।’
‘ওহ, পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ারের মেহমান হতে পারেন, আর বাঙালি সিএমএইচের চিকিৎসককের চিকিৎসা নিতে পারেন না!’
‘বাহানা বাদ দেন। আপনাকে জেল খাটতে হবে এবং জেল খোইটাই আপনাকে বের হতে হবে।’
‘পার্টি আপনার আছে, তারা পারলে ইলেকশন করবে। আর না করলে কী করবে, সেটা তারাই ঠিক করুক। স্বপ্ন দেইখেন না।’
শেখ হাসিনা ‘কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে’ ১০টি বছর ধরে দেশ গড়ে যাচ্ছেন জানিয়ে মতিয়া বলেন, ‘একদিকে অগ্নি সন্ত্রাস, অন্যদিকে রেললাইন উৎরানো থেকে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। সেই সাথে সাথে সারা পৃথিবীতে নেতিবাচক প্রচারণা যে শেখ হাসিনার সরকার এই ভুল করেছে, ওই ভুল করেছে।’
‘একের পর এক এই সমস্ত প্রচারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেখ হাসিনা সরকার আপনাদের ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা তিনি দিয়ে যাচ্ছেন, আরও দেবেন, উন্নততর জীবন দেবেন।’
‘একটাই কথা এই দেশের কৃষক শেখ হাসিনার কারণে সার পেয়েছে, কৃষক এই দেশে শেখ হাসিনার কারণে ৫০% ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি পেয়েছে, এই দেশে বিনা পয়সায় কৃষকের সন্তান, শ্রমিকের সন্তান বই পেয়েছে, বিদ্যুৎ পেয়েছে, কী না পেয়েছে। সুতরাং শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার, এই হলো আজকে বাংলার মানুষের কথা’-এই বলে শেষ করেন কৃষিমন্ত্রী।
Discussion about this post