এক সময় বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হতো হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্পকে। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম ও কালক্ষেপণের পর ট্যানারিশিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা সম্ভব হলেও চামড়াশিল্পের দূষণ রোধ করা সম্ভব হয়নি। দুঃখের বিষয়, চামড়াশিল্পের দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গার মতো একই পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে এবার ধলেশ^রী নদীকে। ঢাকার আশপাশের নদ- নদীগুলোর মধ্যে ধলেশ^রীর অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল। তবে চামড়াশিল্পের দূষণসহ কঠিন বর্জ্যরে কারণে ধলেশ^রীর দূষণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ধলেশ^রীর দূষণ বুড়িগঙ্গাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এবার কি তা হলে ট্যানারির দূষণের ফলে ধলেশ^রীকে স্থায়ীভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না? অথচ সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরী গড়ে ওঠার কথা ছিল পরিকল্পিতভাবে। এই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর চামড়াশিল্পের নেতিবাচক প্রভাব রোধ করা ছিল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য। চামড়া প্রক্রিয়াকরণ থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিশোধন ও নিষ্কাশন বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা করা হচ্ছে না। ট্যানারি থেকে নির্গত হওয়া তরল ও কঠিন বর্জ্যরে কারণে ধলেশ^রী নদী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার চারপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে।ট্যানারিগুলোর তরল বর্জ্যরে একটি অংশ সরাসরি ধলেশ^রী নদীতে পড়ছে। প্রতিটি চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনসহ তা চালু রাখার নিয়ম আছে। কিন্তু ‘ইটিপি’ নিয়ম মেনে চালু করা হয় না বললেই চলে। এ ছাড়া তরল বর্জ্য পাইপলাইন দিয়ে নির্গত হওয়ার সময় বর্জ্য শিল্পনগরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব উপচে পড়া তরল বর্জ্য জলাবদ্ধতা যেমন সৃষ্টি করছে, তেমনি এই তরল বর্জ্য কোনো না কোনোভাবে আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। আবার কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারটিতেও (সিইটিপি) যথাযথভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে না। নিয়ম মেনে ‘সিইটিপি’ চালু না রাখাই ট্যানারির বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পরিবেশবাদীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনুযায়ী, বর্জ্য শোধনের পর যে পানি ধলেশ^রীতে ফেলা হচ্ছে তাতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্রোমিয়াম, ক্ষার, রাসায়নিক পদার্থ, লবণসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকছে। ফলে নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। অথচ ট্যানারির তরল বর্জ্য এমনভাবে পরিশোধন করে নদীতে ফেলার কথা, যার ফলে নদীর কোনো দূষণ কিংবা ক্ষতি হবে না। বিষাক্ত বর্জ্যে ধলেশ^রী নদীর পানির রঙ পাল্টে গেছে। নদীতে মাছের মড়ক দেখা দিয়েছে। বর্জ্যরে বিষক্রিয়ায় আশপাশের আবাদি জমির ফলনও কয়েকগুণ কমে গেছে। ট্যানারি ও নদী দুটোই আমাদের বড় সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুটোরই ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ট্যানারিশিল্প টিকে থাকার পাশাপাশি যেন নদীরও কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
Discussion about this post