দেশে ২০২০ সালের পর ইট তৈরির জন্য ইটভাটায় টপ সয়েল ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার (৫ অক্টোবর) সকালে জিইসি কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) আয়োজিত গ্রিন অ্যান্ড পিপিপি কনভেনশন অ্যান্ড এক্সপো’র উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ৫ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। নতুন আবাসনগুলো গ্রিন কনসেপ্টে হচ্ছে। পানিকে সম্পদে পরিণত করতে উদ্যোগ নিচ্ছি। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারি সংস্থাগুলোর ভবন নির্মাণে। সব শৌচাগারে ফ্লাশের কাজে খাবারের পানি ব্যবহার করা যাবে না।
তিনি বলেন, গ্রিন কারখানা নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করছি। গ্রিন কনসেপ্ট নিয়ে না এগোলে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতি হবে। বিশ্বব্যাংকের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে, কাগজ, কাচ, পলিথিন আলাদা করে কম্পোস্ট সারসহ নানা ধরনের মূল্যবান জিনিসপত্র তৈরির জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাম্বুরি পার্ক অল্প টাকায় করে লাখো মানুষের হৃদয় জয় করেছি। বায়েজিদে একটি পার্ক করছি। চট্টগ্রামের প্রাণস্পন্দন ডিসি হিল। এটি সুন্দর করার জন্য বড় প্রকল্প নিচ্ছি। জিইসি মোড়ে ৫০ তলা বাণিজ্যিক ভবন হবে, যেখানে সিনেপ্লেক্সসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ হবে। তিনি বলেন, গ্রিন কারখানা নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করছি। গ্রিন কনসেপ্ট নিয়ে না এগোলে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতি হবে। বিশ্বব্যাংকের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে, কাগজ, কাচ, পলিথিন আলাদা করে কম্পোস্ট সারসহ নানা ধরনের মূল্যবান জিনিসপত্র তৈরির জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে বিআইএফএফএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ফরমানুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ও ফটিকছড়ির পরিবেশবান্ধব কারখানা ফনিক্স সিরামিক অ্যান্ড অটো ব্রিকসের উদ্যোক্তা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, বিআইএফএফএল চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত এই আয়োজন করেছে। অত্যন্ত প্রশংসনীয় এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সুযোগ আছে সরকারি এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থায়ন নেয়ার। তবে আমরা যে সবুজ বা গ্রিন কনসেপ্ট এর কথা বলছি, তার জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম দেশের উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার জন অন্যতম ভুমিকা পালন করে। বন্দর নগরীতে পরিবেশ বান্ধব প্রকল্পে অর্থায়নের আহবান জানান তিনি। চট্টগ্রাম শহরের আয়তন না বাড়লেও মানুষ বেড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার সময় সিটি কর্পোরেশনের সাথে আলোচনা করা হয় না। যদি করা হত। তাহলে প্রকল্পগুলি আরো কার্যকর হত এবং পরিবেশ বান্ধব হত। এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে যেভাবে পারছে, দখল করে নিচ্ছে। এতিমখানা, মসজিদ মাদ্রাসার নাম দিয়ে দখল করছে।
মাহবুবুল আলম বলেন, পিপিপি ভালো মডেল। কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়নি পিপিপি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন হবে এটা সবাই বোঝে। বিআইএফএফএলকে চট্টগ্রামে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ করার জন্য তিনি আহবান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট একেএম আবদুল্লাহ বলেন, আধুনিক বিশ্বে উন্নয়ন হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতি না করে। বিশ্বব্যাংক গ্রিন কারখানাকে সুবিধা দিচ্ছে। কিছু ব্যবস্থা নিলে বিদ্যুৎ কারখানার দূষিত বর্জ্য নির্গমন বন্ধ করা সম্ভব। তাহলে সেটি হবে পরিবেশবান্ধব। পরিবেশের ক্ষতি তাৎক্ষণিক না হওয়ায় অনেকে উদাসীন থাকেন। পরিবেশ অধিদফতরে কারিগরি, জনবলের অভাব রয়েছে। জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিআইএফএফএলের কোনো প্রকল্প মাঝপথে বন্ধ হয়েছে এমন নজির নেই। তিন বছর আগে আমরা যুক্ত হই। তাদের নজরদারি অন্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি। চট্টগ্রামের বাংলা ইটভাটার কারণে কোটি কোটি গাছ কাটা হচ্ছে। চট্টগ্রামে ৪০০ কোটি ইট তৈরি হয়। আমাদের গ্রিন ব্রিকসে জমির টপ সয়েল লাগে না। আমরা প্রতিদিন ১ লাখ ৬০ হাজার ইট তৈরি করব।
সভাপতির বক্তব্যে বিআইএফএফএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরমানুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএফএফএল ২০১৭ সালে বিনিয়োগের মাধ্যমে ৬৪ কোটি টাকা লভ্যাংশ সরকারি তহবিলে জমা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তিন হাজার ৬০৩ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, গ্রিন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এক হাজার ৩৬৩ টাকা, পরিবহন ও বাণিজ্য খাতে দুই হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা এবং পর্যটন খাতে ৯৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
অংশগ্রহণকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ হল সেনাবাহিনীর জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প, সিটি ব্যাংক লি. সিটি ক্যাপিটাল লি., বিএসআরএম, ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার, দেশ এনার্জি লি.,বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার লি. রয়েল টিউলিপ সী পার্ল, স্যানমার প্রপার্টিজ, এক্সিলন ইঞ্জিনিয়ারিং, মিশন এশিয়া পাওয়ার, ইউনিক্লিন টেকনোলজি, ইকো ফ্রেন্ড, প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়, সাদার্ণ বিশ^বিদ্যালয়, সার্জিকেয়ারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দর্শনার্থীদের জন্য ফ্রি ওয়াইফাই এবং ফার্স্ট এইড সেবা দেয়া হবে। শেষ দিন সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফাহমিদা নবী এবং ফকির শাহাবুদ্দিন।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা: বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বিআইএফএফএল এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা ও নির্বাহি পরিচালক এস এম ফরমানুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন দৈনিক পূর্বকোণের চীফ রিপোর্টার নওশের আলী খান, অবসরপ্রাপ্ত ফ্রিলেন্স আর্টিস্ট নাজলী লায়লা মনসুর, অধ্যাপক যুবরাজ জাহেদ প্রমুখ। প্রতিযোগিতায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৩০০ শিশু অংশগ্রহণ করে। শিশুদের প্রকৃতি এবং সবুজের প্রতি আকৃষ্ট করতে মেলার প্রথম এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান আয়োজকরা। প্রতিযোগিতার প্রমথ পুরুস্কার ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরুস্কার ৩০ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরুস্কার ২০ হাজার টাকা করে নির্ধারন করা হয় এবং চতুর্থ পুরষ্কার ৯টি প্রতিটি পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়া সকলের জন্য ছিল শান্তনা পুরষ্কার ।
