কুতুব উদ্দিন রাজুঃমাখলুকাতের সূচনা থেকে স্রষ্টা-সৃষ্টির বন্ধন প্রেমের গাঁথু নিতে গাঁথা, যে প্রেমের অন্তরালে লুকানো ইনসানিয়াতের স্বার্থকতা। যুগ থেকে যুগান্তর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ প্রেমের তাড়নায় সৃষ্টি সদা আকুল, যে প্রেমের শিরোনাম হুব্বে রাসূল।‘হে যুবক নামাজ পড়, রোজা রাখ, নবী কারিম (দঃ)’র উপর দরুদ পড়, দ্বীন ইসলামের মৌল বুনিয়াদ প্রিয় রাসুল (দঃ)’র ভালোবাসায় জড়ানো। যাঁরা এ প্রেমকে ধারণ করেছেন তাঁরা মহান আল্লাহর দয়ার বন্ধনে বাধানো, পথভ্রষ্ট হন না কখনো। যাঁরা স্থান-কাল-পাত্রের গন্ডি পেরিয়ে সুদূর আরব থেকে আজমে ধরণীর প্রতিটি প্রান্তরে ইসলামের সুশীতল শান্তির বার্তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসুল (দঃ)’র প্রেমের অলঙ্করণে, অনুসরণে, অনুকরণে এবং বিণয় স্মরণে। যতক্ষণ মুমিনগণ এ প্রেমকে বুকে নিয়ে চলেছেন ততক্ষণ জমিনের উপর তাঁরা বীরদর্পে বিচরণ করেছেন, হৃদয়ে জাতে পাকের অস্তিত্বকে অনুভব করেছেন, উপলব্ধি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাতের শ্রেষ্ঠত্ব। নবীজির রেখে যাওয়া ইসলাম যে সব মহামানবের আত্মত্যাগে চির সতেজ ছিল তাঁদের ধর্ম-কর্ম, মেধা-মনন, চিন্তা চেতনার ভিত্তি ছিল ইত্তেবায়ে রাসূল। সময় প্রবাহের স্রোতধারায় ইসলাম যখন ষড়যন্ত্রের সয়লাবে পর্যবসিত, ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত, জ্ঞান পাপীদের অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত, আপন স্বকীয়তা হারিয়ে পথহারা মুসাফিরের ন্যায় তৃষ্ণার্ত, চারিদিকে দুর্যোগ আর দুর্যোগ যেন, তবে বাঁচার উপায় কি নেই কোন? কে দেবে শাশ্বত শান্তির সোনালী দিশা, আঁধার ধরায় ফুটাবে রঙিন আলোর উষা, দিশেহারা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য যাঁর হৃদয় কেঁদে উঠেছিল তিনি খলিফায়ে রাসূল (দঃ) হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, প্রতিষ্ঠাতা, কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ। কাগতিয়ার মিনার থেকে ঘোষিলেন- ‘হে যুবক! নামাজ পড়, রোজা রাখ, নবী কারিম (দঃ)’র উপর দরুদ পড়, মাতৃভূমি শান্ত কর।’ গাউছিয়তের কন্ঠে শান্তির এ আহবান শুনে কাগতিয়ার পাক গলিতে জড়ো হতে লাগলো পথভোলা সব তৃষিত যুবক। গাউছিয়্যতের সংস্পর্শে এসে নূরে মোস্তফার আস্বাদনে শান্ত হলো যাদের তপ্ত দগ্ধ অতৃপ্ত পরাণ। ফলশ্রুতিতে খোদার ভয়ে এলো তাদের নয়নে অশ্রু, বদনে শোভিত হলো নবীর সুন্নাতে রাঙানো শশ্রু। নবীকে সাক্ষী রেখে মহাব্বতের নিয়তে ভালোবাসার ফরিয়াদে দৈনিক ১১১১ বার দরুদে মশগুল, বিনিময়ে হৃদয়ে ঠাঁই নিল মহাব্বতে রাসূল। তাহাজ্জুদের জায়নামাজে অনুতাপের অশ্রু ঝরায় অফুরান, সবরে আর শোকরে হয়ে উঠলো তাকওয়াবান। খুলুছিয়তের নিশানা তাক করে নফস্ শয়তানের বিরুদ্ধে গড়ে তুললো প্রবল প্রতিরোধ, উদ্দেশ্য শুধু একটাই মঞ্জিলে মকছুদ। ফয়েজে কোরআনের নূরে আঁধার ক্বলব হল উদ্ভাসিত, আলোকিত মানুষ রূপে ধরণীতে হল স্বীকৃত। মোরাকাবা মোশাহাদায় খুঁজে ফিরে হাকিক্বতের ঠিকানা, তারই পথ ধরে মিটে প্রিয় রাসূলের দিদার লাভের বাসনা। হুব্বে নবীর সুমধুর যন্ত্রনা বুকে জমে কাগতিয়াওয়ালার পাক তাওয়াজ্জুহ্র বরকতে, পাপী তাপী জেগে উঠে খোদাপ্রেমের শক্তিতে, জীবন যৌবন কাটায় তবে মারেফাতের দীপ্তিতে, নবী পাবার তৃপ্তিতে। খোদার তালাশে ইবাদত বিলাসে উজ্জীবিত সেই তাকওয়াবান যুবকদের নিয়ে গঠন করলেন হিলফুল ফুযুল সদৃশ ‘মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ’, যার লক্ষ্য সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজের নিষেধ, পাথেয় রূপে হৃদয়ে মিলে ইছলাহি ভেদ। এ যেন কোরআনুল কারিমের সেই আয়াতের বাস্তবায়ন- “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দিবে।’’ – সূরা আল ইমরান ঃ ১১০ হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর এ কালজয়ী দর্শন ছড়িয়ে পড়ল নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়ে থেকে জজিরাতুল আরবের মরু প্রান্তরে, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের সকল স্তরে। এশায়াতের প্রবল জোয়ারে খোদাপ্রেম তরঙ্গ দোলা দিল নিখিল সৃষ্টির সর্বত্র, অনাচার, অশান্তি ও অপয়ার অন্ধকার দূর হয়ে ধরা হলো পবিত্র, সকলে যেন সকলের মিত্র। শান্তি প্রতিষ্ঠার এ আধ্যাত্মিক মহাজাগরণের খোদায়ী পয়গাম বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র কাছে পৌঁছে দিতে আগামী ২৯ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, চট্টগ্রামের বায়েজিদস্থ গাউছুল আজম সিটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের ঐতিহাসিক তরিক্বত কনফারেন্স। পরিশেষে গাউছুল আজমের বিশ্বজোড়া, রাসূলনোমা তরিক্বতের প্রেম সুধা আস্বাদনের মাধ্যমে নবীকে বুকে ধারণ করে হেদায়তময় শান্তির আলোকবর্তিকার রওশনে আলোকিত হওয়ার আহবান জানান। যে পথে স্রষ্টার সান্নিধ্য, নবীজির নৈকট্য চির মধুময়; খোদায়ী প্রেম সুধা রসের সুগভীর বিনিময়; ইহ-পরকালের মহামুক্তি নির্ভয়ে নিশ্চয়।