নওগঁ ,মেহেদী হাসান অন্তরঃ দরীদ্র রেজাউল ইসলামের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন,দুই শতাংশ জমির উপর একটি মাটির ঘরে বসবাস। সরকার থেকে ‘জমি আছে, ঘর নাই’ আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক (এনজিও) থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গত পাঁচমাস আগে ঘরের জন্য দিয়েছেন। আর প্রতিমাসে ১ হাজার ৪শ’ টাকা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু এখনও ঘর পাননি তিনি। এমন ঘটনা নওগাঁর রানীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কারীগর পাড়ার রেজাউল ইসলামের। এ উপজেলায় সরকারের ‘জমি আছে, ঘর নাই’ প্রকল্প নিয়ে চলছে নয়ছয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন পরিবারের জন্য ৩৮৫টি আধাপাকা ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা। ঘর বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর তৈরীতে চলছে নানান অনিয়ম। নিম্নন মানের সামগ্রী দিয়ে পিলার তৈরী করা হয়েছে। ঘর নির্মাণ শেষ না হতেই পিলার ভেঙে গেছে। দরজা, জানালার কাঠে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরের টিনের ছাউনিতে রুয়ার পরিবর্তনে বাটাম (পাতলা কাঠ) ব্যবহার করা হয়েছে। যাদের জমি আছে ঘর নাই, তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ঘর দেয়া হয়েছে। আর এ কাজে সহযোগীতা করেছেন স্থানীয় কিছু রাগব বোয়াল ও কিছু সুবিধাভোগী দালাল । আর এসব অনিয়মের সাথে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ঘর নির্মাণের সরঞ্জামের পরিবহন ভাড়াও গুনতে হয়েছে সুবিধাভোগীদের। অন্যান্য ইউনিয়ন খোঁজ নিয়ে একই চিত্র জানা গেছে। খট্টেশ্বর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্ত রুমেলা অভিযোগ করে বলেন, ঘর দেয়ার নামে কিছু অসাধু ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল। ঘর নিতে হলে নাকি টাকা দিতে হবে। গরীব মানুষ এতো টাকা কিভাবে দিবো। টাকা দিতে না পারায় কপালে ঘর জোটেনি। একই গ্রামের উপকারভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘর পেতে কিছু খরচ হবে ,এছাড়া ঘর নির্মাণেও কিছু টাকা মিস্ত্রী বাবদ খরচ হয়েছে। টয়লেটের রিং দিয়েছে কিন্তু এখনও নির্মাণ হয়নি। মিস্ত্রীরা বলে গেছেন নিজেদের কে টয়লেট তৈরী করে নিতে। পার্শ্ববর্তী উপকারভোগী নিবারন চন্দ্রের স্ত্রী বলেন, ঘর শুরু করার আগে মেম্বার বলেছিল কিছু লাগবেনা। কিন্তু কাজ শুরু করার পর ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ঘরের পিলারগুলো (খুটি) তেমন ভাল না হওয়ায় এখনই ভেঙে গেছে। উপরের টিনের ছাউনির চার কোনায় রুয়ার পরিবর্তে বাটম দেয়া হয়েছে। সিমেন্ট নিয়ে আসতে কিছু খরচ দিতে হয়েছে। এছাড়া টয়লেট তৈরী করে দিতে আরো টাকা লাগবে বলে মিস্ত্রীরা বলেছে। এ ব্যাপারে খট্টেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু বলেন, তদবির করে ঢাকা থেকে আমার ইউনিয়নের জন্য ৬৬টি ঘর নিয়ে আসছি। এলাকার গরীব লোকজন ঘর পেয়ে উপকৃত হচ্ছে এটা আমার রাজনৈতিক বেনিফিট এবং ভাললাগা। তবে ঘর দেয়ার নামে কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের গত জুন মাসে ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সদ্য বিদায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব এর সভাপতিত্বে সকল বাস্তবায়ন কাজ সমাপ্ত করার জন্য শতভাগ চেষ্টা করেছি। সঠিক ভাবেই ঘর নির্মাণ করেছি। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি। তবে ঘর দেয়ার নামে টাকা নেয়া অভিযোগটি ভিত্তিহীন।রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আল মামুন বলেন, সবেমাত্র যোগদান করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩৮৫ টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও টাকার বিনিময়ে বরাদ্দের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।